সমুদ্র বৃক্ষে দীর্ঘ রানওয়ে দৃশ্যমান দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় রানওয়ে ও বৃহৎ টার্মিনাল হবে : পর্যটন প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ২০:৫২ | অনলাইন সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

চলতি বছরই শেষ হচ্ছে কক্সবাজার বিমান বন্দরে সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে রানওয়ের নির্মাণ কাজ। আর এই রানওয়ের কাজ শেষ হলেই এটি হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রানওয়ে।

আর এই প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন এসে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সমুদ্রের বুকের প্রথম রানওয়ে দৃশ্যমান হয়েছে। এগিয়ে উদ্বোধন হবে শিঘ্রই।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারকে আরও বৃহৎ পরিসরে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর করার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় রানওয়ের কাজ শুরু হবে। একই সঙ্গে সমুদ্র পানে আরও বড় পরিসরে একটি টার্মিনাল নিমার্ণ করা হবে। এর জন্য সকল পর্যায়ের মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

সোমবার সন্ধ্যা ৭ টায় প্রতিমন্ত্রী বিমান বন্দর প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন। এর আগে মন্ত্রী বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় খুরুশকুল সেতু পরিদর্শন করেন। বিকাল ৫ টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ক এক মতবিনময় সভায় অংশ নেন তিনি।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারি চীনা প্রতিষ্ঠান বলছে, নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর এবছরের মধ্যেই সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে বিমান ওঠানামা করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ প্রায় শেষ।

কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক লি গুয়াংচি বলেন, সমুদ্রের বুকে রানওয়ে প্রকল্পের কাজটা সহজ ছিল না। ২০২১ সালে কাজ শুরুর পর থেকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশেষ করে করোনা কাল, এরপর শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর উত্তাল সাগরকে বসে আনাসহ জটিলতা। কিন্তু সব কিছু মোকাবিলা করে রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে সমুদ্রের বুকে রানওয়ে। আরও কিছু কাজ রয়েছে যা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শেষ করা হবে।

তিনি জানিয়েছেন, শুধু সূর্যের আলোতে আকাশপথে কক্সবাজার যাওয়ার দিন শেষ হচ্ছে। অল্প কিছুদের মধ্যেই রাতেও যাত্রী নিয়ে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন করবে। এতদিন বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য কম ও অন্যান্য অবকাঠামো অনুন্নত থাকায়, সব ধরনের বিমান চলাচল করতে পারত না। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকদেরকে, ঢাকা হয়ে কক্সবাজার যেতে হয়। আর এর ফলে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদেরকে।

এসব ভোগান্তি দূর করার জন্য রানওয়ে এবং টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণের মাধ্যমে, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে, ২০১২ সালে একটি মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জায়গা না থাকায় রানওয়ে সম্প্রসারণ নিয়ে জটিলতা দেয়া দেয়। শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা থেকে, সমুদ্র সৈকতের ভেতরেই রানওয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়।

অবশেষে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, ২০২১ সালে শুরু হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ। যার জন্য প্রথমে সমুদ্রের তলদেশে ব্লক নির্মাণ করা হয়। বিশাল ঢেউ থেকে সুরক্ষা দিতে, কংক্রিট ফেলে গড়ে তোলা হয় বাঁধ। তারপর সেটির ভেতরে বানানো হচ্ছে স্থাপনা। দেশে এই প্রক্রিয়ায় এবারই প্রথম কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, সাগরের পানি নিষ্কাশন করে জমি ভরাটের মতো চ্যালেঞ্জ, করোনার দুর্যোগ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব বাধা পেরিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে আছে। এখন ভবনের ভেতর ইমিগ্রেশন, বোর্ডিং পাস, লাউঞ্জের কাজ করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯০ শতাংশের বেশি। আশা করছি, চলতি বছরেই মধ্যেই সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে নির্মিত রানওয়ে দিয়ে বিমান ওঠানামার করবে।

প্রকল্প সংশ্লিস্টরা জানিয়েছে, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২.৭৪ কিলোমিটার। সম্প্রসারণ কার্যক্রম শেষে আধা কিলোমিটার বেড়ে, নতুন দৈর্ঘ্য হবে ৩.২ কিলোমিটার। দৃষ্টিনন্দন এ রানওয়েটি হবে উপমহাদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে, সমুদ্র শাসন করে তৈরি করা প্রথম রানওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।