"গাছ লাগিয়ে যত্ন করি সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি" প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শহীদ দৌলত ময়দানে শুরু হয়েছে ১০ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা। বৃক্ষ মেলাকে ঘিরে মাঠে তৈরি হয়েছে ঘন সবুজের সমারোহ।
মেলায় স্থান পাওয়া নানা প্রজাতির গাছ, থোকায় থোকায় ধরে থাকা চেনা-অচেনা ফল, প্রস্ফুটিত ফুলের সৌন্দর্য্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। বনজ, ফলজ, ঔষধি গাছ কিংবা ঘর সাজানোর নানা প্রজাতির গাছে ছেয়ে গেছে মেলা।
ফুল, ফল, বনজ আর ওষধি গাছের চারা দিয়ে সাজানো হয়েছে সারিসারি স্টল। রয়েছে বিদেশি নানা প্রজাতির গাছের চারা। বাসার ছাদে কিংবা বারান্দায় যারা সবুজের ছোঁয়া পেতে চান তাদের কথা মাথায় রেখে স্টলে আনা হয়েছে টব বা লতা বিশিষ্ট গাছের চারা। প্রথম দিনেই নানা বয়সী, শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় বেশ জমে উঠেছে বৃক্ষমেলা। দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে। এই সময় ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় থেকে যতটা না গাছ কিনছেন তার চেয়ে বেশি ঘুরে দেখছেন। কারো পছন্দ হলে গাছ কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন। গতকাল রোববার মেলা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
মেরিন এগ্রো'র ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'এখনো স্টল সাজানো হচ্ছে। ফলজ বনজ ও ঔষুধি গাছের কয়েক প্রজাতির চারা মেলায় এনেছি। তবে ফলজের মধ্যে কদ বেলের চাহিদা বেশি। একটি চারা ১০০০ হাজার টাকা, ড্রাগন ১০০০ হাজার। মেরিন এগ্রো'র সবচেয়ে আকর্ষনীয় একটি বিদেশি মাল্টা গাছের চারা। যে গাছে তিন ধরনের ফলন হয়। নাকফুরি কমলা, থাই মাল্টা ও ভেড়া কাটা মাল্টা নামের তিনটি ফল ঔ গাছটিতে দেখা যায়। এই গাছটি সকলের নজর কাড়বে বলেন তিনি'।
এমরান নার্সারীর মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, 'শুরু থেকেই বৃক্ষ মেলায় গাছের চারা নিয়ে আসছি। আম, আলিগুট, ডালিম, সুপারী, নারিকেল, লেবু, আমলকীসহ বিভিন্ন ফলজ ও শোভাবর্ধনের চারার চাহিদা বেশি। তার স্টলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চারার দাম রাখা হয়েছে বিভিন্নভাবে। শরগুটা ( আলিগুট) ১২০০ টাকা, কালো জাম হাইব্রিড ১৫০ টাকা, হাড়িভাঙ্গা, ৩০০-৩৫০, বারো মাসি পেয়ারা ২০০-২৫০, আমড়া গাছ- ৫০০-১০০০ টাকা, আমলকী হাইব্রিড ৭০০ টাকা'।
সাকিব নার্সারীর বাবলু বলেন, 'ফলজ গাছের চাহিদা বেশি। তারা অল্প সময়ের মধ্যে ফলন পেতে পারে একরকম চারা কিনতে আগ্রহী। তার নার্সারিতে ২০০ শো প্রজাতির ফলজ বনজ ও সুভাবর্ধনের গাছের চারা রয়েছে। মিষ্টি জলপাই ৪০০ টাকা, থাই আলিগুট ৫০০ টাকা, ভেড়া কাটা মাল্টা ৫০০ টাকা, বারি ফোর মাল্টা ১৫০০ টাকা, তেজপাত ৫০০, কাটিমন আম (বড় বালতি) ২০০০ টাকা, ব্লেক ষ্টোর ২৫০০ টাকা, তিন চাকা পাত ১৫০০ টাকা, হানি ডো ১০০০ টাকা, গনেশ ৭০০ টাকা, ডগ মাই ২০০০ টাকা, বড় ছোট ১০০০ টাকা'।
মেলায় স্টলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর দাম প্রজাতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকার চারা এখানে স্থান পেয়েছে।
গ্রিন স্পেস নার্সারির রাসেল উদ্দিন বলেন, 'ক্রেতাদের ফলজ গাছের চাহিদা বেশি। তারা অল্প সময়ের মধ্যে ফলন পেতে পারে একরকম চারা কিনতে আগ্রহী। তার নার্সারিতে ২০০ শো প্রজাতির ফলজ বনজ ও সুভাবর্ধনের গাছের চারা রয়েছে'। মেলায় ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সকলেই ঘুরতে এসেছেন।
আলির জাহাল থেকে মেলায় এসেছেন, মোহাম্মদ আবুল কালাম। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, 'বাড়ির সামনে বড় উঠোন আছে। দেয়ালের পাশে কিছু ফলজ গাছ লাগাবো। এছাড়া বাড়ির সৌন্দর্যের শোভাবর্ধনের গাছ নেব। তার হাতে দু'টি আমের চারা ও একটি আতা গাছের চারা দেখা যায়।
তিনি বলেন, ' কাটিমন আমের চারা নিয়েছি। দাম নিয়েছেন ৩০০ টাকা'। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারভিম আহসান বলেন, বৃক্ষ আমাদের জন্য খুবই উপকারী। সময় পেলেই ঘরে গাছের পরিচর্যা করি। মেলায় আসা মানে নানা প্রজাতির গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি। তাই সময় পেলেই প্রতিবছরই বৃক্ষ মেলায় আসি'।
এছাড়া মেলায় আরও পাওয়া যাচ্ছে চেনা অচেনা নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ। এদের মধ্যে আছে- জবা ফুল, ম্যান্ডেভিলা, ফুল, হাসনাহেনা, পলাশ, কনকচাপা, বাসন্তি, মালতী, নয়নতারা, আম, আতা, কুল, বড়ই, ডালিম, করমচা, বেল, জাম্বুরা, কাঁঠাল, লাল কাঁঠাল, চাম কাঠাল, ডুমুর, কাজু বাদাম, ডুরিয়ান, অলিভ, কাউ, পিচ, কিউই ফল, অ্যাভোকেডো, আলমন্ডা, ড্রাসিনা, চেরী ফল, পার্সিমন ফল, ড্রাগন, ট্যাং ফল, অ্যাপ্রিকট ফল, আদা জামির, স্ট্রবেরি পেয়ারা, বিলাতি গাব, রাম্বুটান, জয়ফল, সাদা নাশপতি, রাবাবা, মাল বেরি , লোকাট ফল, এবিউ ফল কালোজাম, সাতকরা, সফেদা, কদবেল, আঁশফল, ঘৃতকুমারী, লটকনসহ নাম জানা-অজানা হাজারো ফুল ও ফলের দেশি-বিদেশি গাছ।
বিভিন্ন স্টল মিলিকরা জানালেন, বর্ষার শুরুতে মেলার আয়োজন করলে ক্রেতা চাহিদাও বাড়তো এবং বিক্রিও ভালো হত।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, 'সময়মত বৃক্ষ মেলা করার চেষ্টা করেছি। প্রতিবার জুলাই মাসে বৃক্ষ মেলা হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি'।
তিনি বলেন, 'বৃক্ষের প্রতি মানুষের কদর বাড়ছে। আজকাল দেখা যায়, ছোট একটা জায়গা পড়ে থাকলে সেখানেও বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপণ করে। বৃক্ষের সাথে মানুষের একটা নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়েছে। দেখা গেছে পতিত অনেক জায়গায় মানুষ এখন গাছ লাগাচ্ছে। আমারও সবুজে সবুজায়ন হোক আমাদের এই দেশ'।
বিভাগীয় কর্মকর্তা ( দক্ষিণ) মো. সরওয়ার আলম বলেন, ' বৃক্ষ মেলা মানে মানুষের সাথে গাছের একটি পরিচিত হওয়া। গাছের প্রতি সকলের মায়া আছে। আজকাল জায়গা থাকলেই সেখানে মানুষ গাছ লাগাচ্ছে। গত কয়েকবছরের বৃক্ষের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। সকলকে বৃক্ষ মেলায় আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ' মেলায় আসুন মন ভালো হয়ে যাবে। গাছের সাথে মানুষের নিবিড় একটা সম্পর্ক তৈরি হয়'।
উল্লেখ্য, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী এই বৃক্ষমেলা চলবে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত। মেলায় মোট ৩৫ টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য বৃক্ষমেলায় প্রবেশ একদম ফ্রি।