অফসিজনের টমেটো চাষে ঝুঁকছেন ফটিকছড়ির কৃষকরা
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৮:০৩ | অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো ও ফটিকছড়ি প্রতিনিধি
শীতকালীন সবজি হিসেবে বেশ পরিচিত টমেটো। শীতের পরিবর্তে বর্তমানে গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমেও টমেটো চাষের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমে টমেটো চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একদিকে যেমন অসময়ে বাজারে টমেটোর সঙ্কট মিটানো যাবে তেমনি কৃষকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি বিভাগ।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন, বারি-৮ হাইব্রিড জাতের টমেটো খেতে বেশ সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। তার দামও রয়েছে বেশ ভালো। ফলে কৃষকরা অসময়ে (অফ-সিজন) টমেটো চাষে ঝুঁকছেন।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউপির অলিপুর গ্রামের সুবলছড়ি এলাকার কৃষক মো. ইকবাল হোসেন। পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথমবারের মতো ৪০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সামার টমেটো (বারি-০৮) চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় তিনি গত জুনের শুরুতে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ৩৫০০টি হাইব্রিড জাতের এই সামার টমেটোর চারা লাগিয়েছেন।
তিনি চারাগুলো উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় রংপুর নাসিক নার্সারি থেকে সংগ্রহ করেন। চারা রোপনের ৪৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই গাছে ফুল ও ফল আসায় বেশ উৎফুল কৃষক ইকবাল। তিনি জানান, ৪০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামুলকভাবে সামার টমেটোর চাষ করেছেন। এতে তিনি মালচিং পেপার ছাড়াও পোকামাকড় আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ৪০টি ইয়েলো ট্রেপ, ৪টি চেরানঙ, গাছের গঠন ঠিক রাখতে ৪০০০ হাজার(প্রায়) বাঁশের খুঁটি, রশি, সুতা, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে নেট মাচা ব্যবহার করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিত্যক্ত অনাবাদি উচু জমিতে সামার টমেটোর চাষ করা হয়েছে। মালচিং পেপার ব্যবহার করায় আগাছা নেই বাগানে। ফলে, টমেটো গাছগুলো বেশ পরিপক্ব হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ রঙের টমেটো।
আলাপকালে কৃষক ইকবাল বলেন, গ্রীষ্মকালীন এই জাতের টমেটো চাষে খরচ একটু বেশি হয়। তবে এর চাহিদা ও বাজার মূল্য ভালো থাকায় ৪০ শতক জমি থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।’ তিনি বলেন, অল্প সময়ে প্রতিটি গাছে ১ কেজি মত ফল হয়েছে। গাছ দিনদিন বড় হচ্ছে। প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৫ কেজি করে ফল আসার সম্ভবনা রয়েছে। অন্য কৃষকরা টমেটো চাষে এগিয়ে এলে দেশের টমেটোর চাহিদা মিটবে। আমদানি করতে না হলে দেশের টাকা দেশে থাকবে। তিনি তাঁর মতো করে অন্য কৃষকদেরও আহ্বান জানান এ পদ্ধতিতে টমেটোর চাষ করতে। আর সেই ক্ষেত্রে তিনি কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন বলেও জানান।
তাঁদের প্রয়োজনীয় পরামর্শে কৃষক নজরুল ইসলাম মালচিং পদ্ধতিতে টমেটোর আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন দাবি করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, 'কৃষকদের নিয়ে উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনে কৃষি অফিস নিয়মিত বিভিন্ন ট্রেনিং করে থাকে। কৃষক ইকবাল একজন বিচক্ষণ চাষী। অতিতে এখানে সবজি চাষ করে তেমন লাভবান হওয়া যেত না। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্রীষ্মকালিন সামার টমেটো চাষ করে এখানে বেশ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি কৃষক ইকবাল এখানে বেশ লাভবান হবেন।'
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, জমিকে উত্তমরূপে তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করে সেখানে বীজ বপন করতে হয়। তারপর সে বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। মালচিং পেপার হলো বিশেষ ধরনের পলিপেপার (পলিথিন)। বীজগুলো থেকে চারা গজানোর পর চারার স্থানগুলো থেকে মালচিং পেপার ছিঁড়ে দিতে হয়। যাতে করে চারাগুলো মাথা তুলে বড় হতে পারে।
এই মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। সেচের অতিরিক্ত পানি জমে জমি বিনষ্ট হয় না। অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হয় না। ফলে জমি চাষাবাদে শ্রম কমে যাওয়ায় শ্রমিক কম লাগে। উৎপাদন খরচ কমে যায়। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলন অনেক বেশি হয়। গাছের আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এতে করে কৃষক সবদিক থেকে লাভবান হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, 'মালচিং পদ্ধতিতে সামার (বারি-০৮) টমেটো একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। এ জাতটি ফলনও ভালো দেয় এবং বাজারে এটির চাহিদা ও দাম দু'টি বেশি। যে জমিটিতে এ টমেটো চাষ করা হয়েছে জমিটি ছিল পতিত জমি। এ জমিটি এর আগে কয়েকজন লিজ নিলেও কেউ আলোর মুখ দেখেনি। প্রথমবারের মতো এ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে বাজিমাত করেছেন স্থানীয় কৃষক ইকবাল। তাঁকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হয়েছে।'