আজ ২৬ জুলাই, নেত্রকোণার সাত-শহীদ স্মরন দিবস। ১৯৭১ সনের এই দিন নেত্রকোণার ভারতীয় সীমান্ত-ঘেঁষা কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর নামক স্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনির সাথে সামনাসামনি লড়াই করে শহীদ হন সাত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের স্মরন ও শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর যথাযথ মর্যাদা ও ভাব-গাম্ভির্যের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাগণ হলেন- নেত্রকোণার আব্দুল আজিজ, মো. ফজলুল হক, জামালপুরের মো. জামাল উদ্দিন, ময়মনসিহের মুক্তাগাছার মোঃ নূরুজ্জামান, দ্বীজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, মো. ইয়ার মাহমুদ ও ভবতোষ চন্দ্র দাস। এ ছাড়া কালা মিয়া নামের এক কিশোরও এই যুদ্ধে শহীদ হন। তাদের মরদেহ ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি এলাকায় গণেশ্বরী নদীর পাড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১১৭২নম্বর পিলারের কাছে সমাহিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেত্রকোণা জেলা ও কলমাকান্দা উপজেলা ইউনিট কমান্ডসূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুরের বিরিশিতে ছিল পাকিস্তানী বাহিনির বৃহৎ ক্যাম্প। খবর আসে যে, ২৬ জুলাই সকাল ৮টায় বিরিশিরি ক্যাম্প থেকে রসদ নিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের একটি দল নদীপথে নাজিরপুর হয়ে কলমাকান্দা যাবে। তাদেরকে নাজিরপুরের কাছেই আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে ৪০জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ২৫জুলাই সন্ধ্যায় নাজিরপুর পৌছে যায়। তারা ৩টি পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে নাজিরপুর বাজারের সবকটি প্রবেশ পথ আগলে এ্যাম্বুস পাতে। ২৬ জুলাই সকাল ৯টার পরও পাকিস্তানী সেনাদের দেখা না পাওয়া যাওয়ায় এ্যাম্বুস প্রত্যাহার করে ক্যাম্পে ফেরার সিদ্ধান্ত গ্রহণ জানান কমান্ডার।
মুক্তিযোদ্ধারা পায়ে হেঁটে নাজিরপুরবাজারের কাছে পৌঁছালে হঠাৎ করেই পাকিস্তানী বাহিনির আক্রমণের শিকার হন। অপ্রস্তুত থাকলেও পাল্টা জবাব দেন মুক্তিযোদ্ধারা। খুবই কাছাকাছি অবস্থানে থেকে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা-পাকিস্তানী বাহিনির সামনা-সামনি যুদ্ধ, গুলি আর পাল্টা গুলি। দিনভর চলা যুদ্ধে শহীদ হন ৭বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহীনির গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তারার কন্ঠনালি ছিঁড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানী সেনাদলের মাঝেও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সাত-শহীদ স্মরন দিবসকে ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধ দিবসও বলা হয়ে থাকে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা-উপজেলা ইউনিটের পক্ষ হতে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে পুষ্পার্ঘ অর্পণ, আলোচনা সভা এবং বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা।
সকাল ১০টায় নাজিরপুর স্মৃতি সৌধ ও দুপুর ১২টায় ফুলবাড়ির সাত শহীদের সমাধীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এতে অন্যান্যের মধ্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু, সংসদ সদস্য মানু মজুমদার, জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ, পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহম্মেদ, কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক তালুকদার ও নির্বাহী অফিসার আসাদুজ্জামান সহ জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।