সার্ভার জটিলতায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অনলাইনে শুল্ক পরিশোধ মাঝে মাঝে বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন আমদানি রপ্তানির সাথে জড়িত শত শত ব্যবসায়ী।
মঙ্গলবার দিনভর ভোগান্তির পর বুধবার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, শুল্ক কর পরিশোধ নিরবচ্ছিন্ন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জরুরীভাবে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অন্যথায় আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এতে সামগ্রিকভাবে ব্যবসা বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তারা মনে করছেন।
দেশের স্থল ও সমুদ্র বন্দরগুলোকে উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত করে আধুনিকতায় সমৃদ্ধ করা হয়েছে কয়েক বছর আগে থেকেই। তারই ধারাবাহিকতায় কাস্টম হাউসগুলো আধুনিকায়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করে। এতে নানা ক্ষেত্রে পুরনো পদ্ধতি পাল্টে গ্রহন করা হয় নতুন আধুনিক পদ্ধতি। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে ধাপে ধাপে সকল কাজ অটোমেশন সিস্টেমে যুক্ত করা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এর দিক নির্দেশনায় অটোমেশনে সব কাজ যুক্ত করার কারণে ব্যবসায়ীরা সুফল পেতে শুরু করে। বিশেষ করে শুল্ক কর পরিশোধে ভোগান্তি ও দীর্ঘসূত্রতা অনেকটাই কমে যায়। আগে যেখানে সারাদিন কিংবা দু একদিন লাগত সেখানে মুহূর্তেই পরিশোধ হচ্ছে শুল্ক।
গত ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সব ধরনের শুল্ক পরিশোধ অনলাইনে বাধ্যতামূলক করা হয়। ইউজার আইডি দিয়ে আরটিজিএস (রিয়েলটাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) গেটওয়ের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ করা বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও একটি স্বীকৃত মাধ্যম। এতে খুব দ্রুত শুল্ক পরিশোধ করা সম্ভব। দ্রত পরিশোধ হলে পণ্য ছাড় করতে কোন ধরনের বিড়ম্বনা হয়না। অর্থাৎ বন্দর থেকে পণ্য ছাড়ও হয় দ্রুততার সাথে।
অটোমেশনের সুফল পুরো মাত্রায় পাওয়ার সময় ব্যবসায়ীদের চিন্তায় ফেলেছে কাস্টমসের সার্ভার জটিলতা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সার্ভার জটিলতায় গেল সপ্তাহজুড়ে মাঝে মাঝে শুল্ক পরিশোধ ব্যাহত হয়। আর গেল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম কাস্টমসে অনলাইনে শুল্ক কর পরিশোধ করতে গিয়ে সারাদিন ভোগান্তি পোহান ব্যবসায়ীরা। সময়মত শুল্ক পরিশোধ করতে না পারার কারণে অনেকে পণ্য খালাস করতে পারেনি। সার্ভারে জটিলতা কেটে গেলে মাত্র এক ঘণ্টা শুল্ক কর পরিশোধ করেন পারেন ব্যবসায়ীরা। তাও মঙ্গলবার বিকালে সার্ভার সচল হলে শুল্ক পরিশোধ কার্যক্রম শুরু হয়। এতে পণ্য ছাড় করার কাজ ব্যাহত হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনবিআরের সার্ভারের সাথে ব্যাংকের সার্ভার সংযুক্ত থাকে। দুটির কোন একটি সার্ভারের ত্রুটি দেখা দিলে সমস্যা হতে পারে। মাঝে মাঝে এ ধরনের সমস্যা হলেও ব্যবসায়ীদের জন্য খুব বেশি ভোগান্তি হয়না। কোন ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষনিক সমাধান করার ব্যবস্থা আছে।
প্রসঙ্গত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নির্দেশনা মোতাবেক বাণিজ্য সহজীকরণের অংশ হিসাবে এনবিআর গত ২০১৭ সাল থেকে ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে। এ পদ্ধতিতে আমদানিকারক বা তার মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি ট্রেজারিতে শুল্কের অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। এতে শুল্ক কর পরিশোধ কাজ আগের চেয়ে অনেক দ্রুত হয়। শুল্ক কর দ্রুত পরিশোধ হলে ব্যবসায়ীদের সমস্যা আর তেমন থাকেনা। বন্দর থেকে আমদানি পণ্য দ্রুত ছাড় করতে পারেন। আবার রপ্তানি পণ্য দ্রুত জাহাজিকরণ করতে পারেন ব্যবসায়ীরা।
সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, সার্ভার জটিলতা দেখা দিলে অনলাইনে শুল্ক পরিশোধ মাঝে মাঝে ব্যাহত হয়। গেল মঙ্গলবার দিনভর অনলাইনে শুল্ক কর পরিশোধ করা যায়নি। ঘন্টাকানেকের জন্য সার্ভার ঠিক হলেও শুল্ক কর তেমন পরিশোধ করা যায়নি। আমরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে অনুরোধ করবে সার্ভার জটিলতা নিরসনে দ্রুত যাতে ব্যবস্তা নেয়া হয়। অন্যথায় অটোমেশনের সুফল মিলবেনা।