উপজেলার শিমরাইল গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন আবুল হাসেম। আশির দশকে কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিআরডিবি থেকে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে আবুল হাসেম মারা গেলে তাঁর সন্তান মো. আবুল ফয়সাল সেচ পাম্প দেখাশোনা করা শুরু করেন। কিন্তু এর আশেপাশে পরবর্তীতে বেশ কিছু অবৈধ সেচ স্থাপন হয়।
এতে গভীর নলকূপটির আবাদি জমির পরিমাণ আশংকাজনকভাবে কমে যায়। বিপাকে পড়েন গভীর নলকূপের মালিক। এক সময় বিদ্যুৎ বিল দেওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তাঁর পক্ষে। বাধ্য হয়ে ২১/১২/২১ তারিখে অভিযোগ করেন সেচ কমিটি বরাবর। অভিযোগে সেচ পাম্পের আওতাধীন নতুন পাম্পগুলো পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন ভুক্তভোগী আবুল ফয়সাল।
বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী বরাবরও অভিযোগের অনুলিপি প্রেরণ করেন।
অভিযোগ করেও দীর্ঘদিন কোন সুরাহা হয়নি। পরে একসময় প্রতিবেদন প্রকাশ করে অবৈধ ঘোষণা করা হয় ফারুক মিয়ার নতুন পাম্প।
উল্লেখ্য, নতুন পাম্পের পাশেই ফারুক মিয়ার ভাই খলিলুর রহমানের আরেকটি পাম্প রয়েছে। কিছুদিন পর বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী বদলি হয়ে যান। তখন এক পর্যায়ে সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. হাফিজা জেসমিনের সাথে কথা বললে, তিনি নতুন করে অভিযোগ করতে বলেন এবং অভিযোগের পরে অধিকতর স্বচ্ছতার স্বার্থে নতুন করে প্রতিবেদন দিতে বলেন 'বিএডিসি'কে। নতুনকরে করা অভিযোগে শিমরাইল গ্রামের খলিলুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়।
এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে, ২৫/০১/২০২২ তারিখে দুই পক্ষের শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়। শুনানির পর ফারুখ মিয়াকে নতুন পাম্পের কাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার জন্য আবাসিক প্রকৌশলীকে বলা হয়। বিদ্যুৎ না পেয়ে নতুন পাম্প চালু করতে ব্যর্থ হয় সে। কিন্তু পরবর্তীতে খলিলুর রহমানের পুরাতন পাম্প থেকে বিদ্যুতের লাইন এনে নতুন পাম্পে সংযোগ দেন।
পরবর্তীতে ১৬/০৩/২০২২ তারিখে বিআরডিবি আর একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং তাতে খলিলুর রহমানের পুরাতন পাম্প অবৈধ ঘোষণা করে।
১৬/০৩/২০২৩ তারিখ নোটিশের মাধ্যমে খলিলুর রহমান বাচ্চুকে অবৈধ সংযোগটির সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্ব-উদ্যোগে আবাসিক প্রকৌশলী বরাবর জমা দিতে বলা হয়
বিদ্যুৎ না পেয়ে খলিলুর রহমান জেনারেটর ব্যবহার করে সেচ কাজ চালু রাখেন। সরেজমিনে দেখা যায়, নতুনভাবে স্থাপিত অবৈধ পাম্পে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এমনকি সরাসরি ট্রান্সফরমার থেকে নেয়া হয়েছে এই সংযোগ। অবৈধ পাম্পে কিভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ গেল জানতে চাইলে আবাসিক প্রকৌশলী ইমতিয়াজ মামুনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
ভুক্তভোগী আবুল ফয়সাল বলেন,-'আমি প্রায় দুই বছর যাবৎ দৌড়াদৌড়ি করছি কিন্তু কোন সুরাহা হচ্ছে না। অবৈধ পাম্পগুলোর লাইন বিচ্ছিন্ন করার কথা বলে মাসের পর মাস সময়ক্ষেপণ করেছেন আবাসিক প্রকৌশলী। এক পর্যায়ে তিনি জানান কোর্টেন স্ট্যা অর্ডার রয়েছে কিন্তু অর্ডারের কাগজ চাইলে তিনি দিতে ব্যর্থ হোন। আবাসিক প্রকৌশলী বলার আরও ২/৩ মাস পর কোর্টের স্ট্যা অর্ডার আসে। চাইলে বহু আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যেত কিন্তু তিনি তা করেননি। সেচ কমিটির কথার কোন গুরুত্বই তিনি দেননি। কোর্টের মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগ নাগাদ কোন কিছু না করতে নিষেধ করলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পুরাতন পাম্প থেকে ৩৬৫ফুট টানা তারের মাধ্যমে নতুন পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে',যা আইন বহির্ভূত'।
উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন,- 'খলিলুর রহমান বাচ্চুর সেচ লাইনটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে পাম্পটিতে কোর্টের স্ট্যা অর্ডার রয়েছে। এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে এমন শঙ্কায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি'।
বিএডিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) শিবেন্দ্র নারায়ণ গোপ বলেন,-' কোন অবৈধ সেচ থাকলে সেটি তদারকি করা পুরোপুরি সেচ কমিটির দায়িত্ব। অবৈধ সেচ বন্ধ করার জন্য সেচ কমিটির সভাপতি ব্যবস্থা নিবেন। আমাদের দায়িত্ব হলো উনাদের ট্যাকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া '।