কেপিআইভুক্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা থেকে বালুর স্তুপ সরানোর নির্দেশ
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ১৭:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
কেপিআইভুক্ত হার্ডিঞ্জ ব্রীজ সংলগ্ন কৃষি কাজের নামে রেলের জমি নামমাত্র টাকায় লিজ নিয়ে দুই যুগ ধরে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়াই রমরমা বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিশাল বিশাল বালুর স্তুপে ঢাকা পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু। বালু পরিবহনের ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে গাইডব্যাংকের বিভিন্নস্থান ভেঙে ফেলায় (ব্রিজ রা বাঁধ) হুমকির মুখে পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু।
বিভিন্ন পত্রিকা ও অন-লাইনে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে পাকশী বিভাগীয় রেল কর্তৃপক্ষ। পাকশী ইউনিয়ন জুড়ে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ৩০ জুলাই সময়ের মধ্যে বালু অপসারণ করা না হলে নিলামের মাধ্যমে বালু বিক্রি করে দেওয়া হবে।
স্থানীয়ারা বলছেন, রেল কর্মকর্তারা বিশেষ সুবিধা পেয়ে কৃষি জমি হিসেবে নামমাত্র টাকায় লিজ দিয়ে বালুর ব্যবসার সুযোগ দিয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর ঊর্ধ্বতন মহলের চাপে বিভাগীয় রেল কর্তৃপক্ষ হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে বালুর স্তুপ সরিয়ে নিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
কেপিআইএ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু কেপিআইভূক্ত এলাকা। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় দর্শনার্থী রেজিষ্টার নেই, সিসি ক্যামেরা নেই, ব্রীজের উভয় পাশে কাঁটাতারের বেড়া এবং সশস্ত্র টহলের ব্যবস্থা নেই। ব্রিজের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন, ড্রেজিং, মাছ ধরা, নৌকা ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে প্রবেশ পথে এবং মূল ব্রিজের দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
অথচ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন রেলের জমি কৃষি কাজের জন্য লিজ নিয়ে কিছু ব্যক্তি বাণিজ্যিকভাবে অবৈধভাবে বিশাল বিশাল বালুর স্তুপ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ জ ও লালন শাহ সেতুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখিন।
শুক্রবার ( ২৮ জুলাই) দেখা যায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর পাশে পদ্মার তীরে গাইড ব্যাংকের বিশাল এলাকাজুড়ে বালুর স্তুপ। প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার ট্রাক বালু বিক্রি হয়। টাকার হিসাবে এখানে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার বালু বেচাকেনা হয়। এসব বালুর স্তুপ থেকে ট্রাক প্রতি এবং বালুর ফুট হিসাবে অনুযায়ী চাঁদা আদায় করা হয়। এ চাঁদার ভাগ ভাটোয়ারা হয় নানা মহলে বলে জানা গেছে।
বালু ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতা মাসুদ রানা মাসুম বলেন, বালু অপসারণের জন্য মাইকিং করা হয়েছে শুনেছি। এতো স্বল্প সময়ের মধ্যে বালু সরিয়ে নেওয়া সম্ভব না। এখানে কোটি কোটি সিএফটি বালু রয়েছে। এগুলো অপসারণ করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে।
রেল কর্মকর্তারা বলেছেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে যেন আর নতুন করে বালু স্তুপ করা না হয় এবং স্তুপ বালু সরিয়ে নিতেও বলা হয়েছে। পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকার আশপাশে আগে নদী থেকে বালু তোলা হলেও এখন হয় না। অন্য এলাকা থেকে নৌকায় বালু এনে এখানে স্তুপ করে ব্যবসা করা হয়। নৌকায় বালু আনতে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয় বলে শুনেছি। বালু ব্যবসার সঙ্গে কোনোদিনই জড়িত ছিলাম না।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও গাইড ব্যাংকের ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রেল তাদের জমি ইজারা দিয়েছে। তারা ব্যবস্থা না নিলে আমরা কি বলব? রেল-নৌ-পুলিশ ও প্রশাসন তো কিছুই বলে না।
পাকশী রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন-২) বীরবল মণ্ডল বলেন, বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গাইড ব্যাংক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিরাপত্তার স্বার্থে বালু মহাল বা বালুর স্তুপ সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বালুর স্তুপ এখান থেকে সরানোর পর ব্রিজের নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের এলাকা কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হবে।
পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা থেকে বালুর স্তুপ সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বালু ব্যবসায়ীরা এখান থেকে সরিয়ে না নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।