সড়ক দূর্ঘটনায় বাম পা অচল, কষ্টে দিন পার করছে নাঈম
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩, ১৫:৪৯ | অনলাইন সংস্করণ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
কে.কে ট্রাভেলস যাত্রীবাহী বাসটি তখন ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটছিল ওভারটেক এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এসকে বাইক সার্ভিসের মালিক হাসানের গ্যারেজে হঠাৎ ঢুকে পড়লো যাত্রীবাহী বাসটি এবং ধাক্কা খেয়ে সড়কে ছিটকে পড়েন মো: নাঈম এবং হাসান এরপরই তাদের পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় বাসের চাকা।
১৯-২০ বছরের এই দুই তরুণ মধ্যে গ্যারেজের মালিক হাসানকে কুমিল্লা হাসপাতালে অপরজন ইলেকট্রিক মেস্তুরী মো:নাঈম পঙ্গু হাসপাতালের ১৬ নম্বর কক্ষে কাতরাচ্ছেন! বাম পায়ের পাতার ভিতরে ৫ বার অস্ত্রোপচার ও রড দিয়ে প্লাস্টার করা হয়েছে, অপর জনের বাম পায়ের ভিতরে রড দিয়ে প্লাস্টার করে রাখা হয়েছে ও মাথায়, গায়ে গুরুতরও ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাণে বেঁচে গেলেও তারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারের।
মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় বাম পা অচল, এখন পঙ্গু অবস্থায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি নাঈম হাসান (২০)। অচল পা নিয়ে বর্তমানে মানবেতর অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। আজও সেই দূর্ঘটনার কথা মনে হলে সিউরে ওঠেন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ইলেকট্রিক মেস্তরি নাঈম তার আয়ের ওপর নির্ভর করত পরিবারের ভরণ-পোষণ। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা এলোমেলো করে দিয়েছে তার জীবন। তার বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল ইউরোপের পাঠানোর। সে স্বপ্ন এখন ও কল্পনায়ে রয়ে গেল! পঙ্গু হয়েও নাঈম কারো কাছে হাত পাতেনি!
গত ৮ জুন বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২ ঘটিকার দিকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগর এলাকায় ঢাকা মুখী লেনে হাসানের গ্যারেজের এই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
নাঈম দাউদকান্দি উপজেলার পৌর ৬ নং ওয়ার্ড ধোনারচর গ্রামের মোহন সরকার বাড়ির আনোয়ার হোসেনের একমাত্র ছেলে। দুই ভাই বোনের মধ্যে নাঈম সবার বড় বৃদ্ধ বাবা মা বোনকে নিয়ে ইলেকট্রিক কাজ করে কোন রকম চলছে তাদের জীবন।
নাঈমের মা লিপি আক্তার বলেন, গাড়িচালক স্বপন, ঘুমের ভাব, অথবা মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়েছিল এ কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। চালকের অবহেলার কারণেই তাঁর ছেলে পায়ের যন্ত্রণায় ছটফট করছে। আহত ছেলেকে নিয়ে মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা। তিনি দায়ী বাসচালকের শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
নাঈম, হাসান বলেন, গুরুতর আহত হয়ে বেঁচে গিয়েছিলাম। ৫ দফা অস্ত্রোপচারের পর বাম পায়ের পাতা পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে গেছে পায়ের রগ, হাঁড় ভেঙে গিয়েছে, মাথায়, পিঠ, রানের মাংশে গুরুত্ব আগাতের চিহ্ন রয়েছে । এখন পুরোপুরি পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে আছি।নাঈমের বাবা আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন ধার কর্জ এবং জমিজমা বিক্রি করে ৬-৭ লাখ টাকার মত পঙ্গু হাসপাতালে ৫৫ দিনে চিকিৎসা খরচ হয়েছে । চিকিৎসাধীন ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালেই দিন কাটছে তাদের।
সেদিন কী ঘটেছিল- জানতে চাইলে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নাঈম বলেন, একটি মটরসাইকেল মেরামত করার জন্য দাউদকান্দি শহিদনগর এলাকায় এসকে বাইক সার্ভিস হাসানের দোকানে গিয়ে মেরামতের কাজ করি, হঠাৎ করে কিছু বুঝার আগে নোয়াখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা কে,কে ট্রাভেলস বাসটি বেপরোয়া গতিতে হোন্ডা মেরামতকারী হাসান এবং নাঈমকে টেনে হেচরে ১০০ ফুট দূরে নিয়ে যায় এরপর বাসটি আমাদের পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়।"এই সময় দুটি মোটরসাইকেল দুমড়ে মুচড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এখন হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথাই মনে করছেন নাঈম হোসেন। বাম পায়ের গোড়ালী ও পায়ের পাতার রগ এবং হাড় ভেঙে থেতলিয়ে গেছে। ৫ দফা অস্ত্রোপচার করে রড ঢুকিয়ে রেখেছে চিকিৎসকেরা এবং মাথায়, পিঠ, রানের, আঘাতও এখনও ভালো হয়নি।
অপর দিকে একই উপজেলার মটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক হাসান বারপাড়া ইউনিয়নের বড়ই সাত পাড়ার গ্রামের ২ নং ওয়ার্ডের আশ্রাফ আলি স্বর্ণকার বাড়ির আব্দুল হালিমের ছোট ছেলে হাসান বিছানায় তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।
হাসানের বড় ভাই এমরান হোসাইন জানিয়েছেন তাঁর ভাইয়ের কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয়েছে ।পায়ের অপারেশন করে ভিতরে রড বসানো হয়। কিছুদিন পর হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। ফিরে এসে বাড়িতে বন্দি জীবন কাটাতে হয় তাকে।শুরু হয় তার দুর্ভিষহ জীবন।
দূর্ঘটনার আগে দিনমজুরি করে হলেও সংসার মোটামুটি চলতো। চারবার ড্রেসিংও করা হয়েছে। গেল দুই দিন ধরে প্রচণ্ড ব্যাথায় আবোল-তাবোল বকছেন। খেতেও চায় না, জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে। ধার দেনা ঋণ নিয়ে প্রায় ১০-১২ লক্ষ টাকার মত খরচ হয়েছে। কে.কে ট্রাভেলসের গাড়ির সংশ্লিষ্ট মালিককে এ ক্ষতিপূরন বহন করতে হবে।
সোমবার দাউদকান্দি থানার হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, গত ৮ ই জুন শহিদনগর সড়ক দুর্ঘটনায় কে.কে ট্রাভেলস বাসটির বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে, চালক স্বপন এবং বাসটিও আটক করা হয়েছে। তাদের গাড়িটির বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়েছে যাহার জিয়ার নং ১৮৫/২৩ ইং।