চাঁদপুরে সফল উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৩, ২১:৩০ | অনলাইন সংস্করণ
শওকত আলী,চাঁদপুর
চাঁদপুরে সফল উদ্যোগক্তা হেলাল উদ্দিনের উদ্যোগে ৬৩ বছরের পরিত্যক্ত ইটভাটায় বিশ্ব সেরা ২০টি আম জাতের মধ্যে ১৭টি নিয়ে বিদেশি আমচাষের মধ্যদিয়ে ৪৭ জাতের বিভিন্ন ফলের গাছে রঙিন রুপ ধারন করলো ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রো নামের প্রজেক্টটি।
চাঁদপুরে ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রো নামের এ প্রকল্প নতুন করে আলোচনায় আসে ৪৭ জাতের বিভিন্ন ফলের চাষ করে। ১৭টি জাতের রঙিন আমে বর্ণিল হয়ে উঠেছে পরিত্যক্ত ইটভাটাটি।
এই উদ্যোগের বয়স মাত্র আড়াই বছর। উদ্যোক্তা সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন জানান, বিশ্বসেরা ২০টি আমের জাতের মধ্যে ১৭টিই ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রোতে আছে। অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে অস্টিন, অস্টিন গোল্ড, কেইট, কিট, পালমার (ফ্লোরিডা), বেইলি মার্বেল, ভ্যালেন্সিয়া প্রাইড, হেডেন, আলফানসো, নামডকমাই সিমওয়াং, মায়া, টমি অ্যাটকিনস, আতাউলফ, কারাবাউ, কিং অব চাকাপাত, মিয়াজাকি, রেড আইভরি, থ্রি টেস্ট, আরটুইটু, কেনসিংটন প্রাইড ও মহাচানক। এই নানা রঙের আম আমবাগান দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ও পর্যটক আসছে এ বাগানে।
এ বাগানের তত্ত্বাবধায়ক আবদুর রশিদ বলেন, বাগানটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে শীতকালেও আম পাওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আর দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই এসব আম পাকা শুরু হবে।
চাঁদপুর শহরতলীতে প্রায় ৬৩ বছরের পারিবারিক ইটভাটা বন্ধ করে বিশিষ্ট সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন গড়ে তোলেন বিদেশি ফলের বাগান। তিনি বলেন, প্রকল্পটিতে এমন সব বিদেশি ফলের চাষ করা হচ্ছে, যা এই দেশে অপ্রচলিত ও উচ্চ মূল্যের। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ায় হওয়া এসব ফলের জাত বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী করার চেষ্টা করা হয়। সব ক্ষেত্রে সফল হওয়া যায় না। যেসব জাতের ফল এই দেশের আবহাওয়ায় সফল ফলন হওয়ার মত, সে সব জাত সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে।
স¤প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক দর্শনার্থী বাগান থেকে গাছপাকা আম সংগ্রহ করছেন। দাম একটু বেশি হলেও বিদেশি জাতের নতুন আমের স্বাদ নেওয়ার জন্য এখানে আসা অনেকেই আম ক্রয় করছে। এসব আম প্রতি কেজি জাতভেদে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এখানে বিক্রি হচ্ছে,বিভিন্ন দেশের ড্রাগন ফল লাল, গোলাপি, খয়েরি ও হলুদ রংয়ের ড্রাগন । এ ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০টাকা পর্যন্ত।
এখানকার নার্সারিতে ৫০০ টাকার নিচে কোনো ফলের চারা বিক্রি হয় না বলে জানালেন কর্মচারী বাপ্পি সরকার।
এ ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রো নামের বাগানে বেড়াতে আসা ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা মিয়া জানান, ‘আমার গ্রামের বাড়ির কাছেই ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে পরিত্যক্ত ইটভাটায় এ রকম একটি আমবাগান হবে, আমার কখনো কল্পনায়ই ছিল না। আমি খবর পেয়ে এটি দেখতে চলে এসেছি। কিছু আমও ক্রয় করেছি। ভাবছি আমার গ্রামের বাড়ির জন্য কিছু নতুন জাতের আমের চারা ক্রয় করবো
উদ্যোক্তা সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন জানান, বিশ্বসেরা ২০টি আমের জাতের মধ্যে ১৭টিই ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রোতে প্রজেক্টে রয়েছে। এই আমবাগান দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ও চাঁদপুর জেলার মানুষ আসছে।
চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা দর্শনার্থী নাহিদ সুলতানা জানান, এই ফলবাগান সত্যি দেখার মতো একটি বাগান ‘আমবাগানের কথা শুনে এসে দেখি এখানে বিদেশি নানা ধরনের ফলের সমারোহ।চাঁদপুর স্টেডিয়াম মার্কেটের ব্যবসায়ী মো: ফেরদৌস জানান, ‘নতুন নতুন জাতের আম দেখে খুব ভালো লাগছে। চিন্তা করছি, আমার ছাদবাগানে এমন কিছু আমের চারা রোপণ করে বাগান করা যায়কিনা।’
ফ্রুটস ভ্যালি অ্যাগ্রো প্রকল্পের উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন বাগানের পাশাপাশি ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক তৈরির কারখানা করেন। তিনি বলেন, তিনি সাংবাদিকতা করতেন। দেশ-বিদেশে অনেক ঘুরে দেখেছেন। সেসব দেশে নানা ধরনের ফল চাষ দেখে আগ্রহী হন। পরে নিজের পৈতৃকভাবে পাওয়া জায়গা ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ফলের বাগান করার কাজ শুরু করেন। এখন তাঁর বাগানে আমের পাশাপাশি ৪ জাতের অ্যাভোকাডো, ৬ জাতের লাল ও হলুদ ড্রাগন, ৩ জাতের কমলা, ৯ জাতের মাল্টা, ১১ জাতের আঙুর, আপেল, পেয়ারাসহ নানা ফল রয়েছে। কোনো ধরনের কীটনাশক ছাড়াই ফলের আবাদ করা হয় এই বাগানটিতে। ১৪ জন অভিজ্ঞ শ্রমিক বাগানের পাঁচ শতাধিক গাছের যত্নের জন্য রয়েছে।
এ আম বাগানের আম সংগ্রহের গল্প শোনান হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, স্পেনের প্রধান বাণিজ্যিক আম অস্টিন। এরই আরেকটি জাত অস্টিন গোল্ড। ইতালি থেকে অস্টিন গোল্ডের চারা সংগ্রহ করেছেন তিনি। রোপণের আড়াই বছরের মাথায় ছোট্ট এই গাছে বাম্পার ফলন হলো। ডিম্বাকৃতির মাঝারি আমের ওজন ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। নজরকাড়া গাঢ় বেগুনি রঙের আমটি খেতে আত্যান্ত সুস্বাদু, ঘ্রাণ ভালো ও রসালো,যা’মূখ ভরে যায়।