যমুনায় ফের বাড়ছে পানি

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১৫:৩০ | অনলাইন সংস্করণ

  টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের ছয় উপজেলায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। যমুনায় ফের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, সদর,নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ নানা স্থাপনা নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। পাউবো সূত্র জানায়, চলতি বর্ষা মৌসুমে যমুনা সহ জেলার অভ্যন্তরীণ নদীর পানি বাড়তে
থাকলেও গত ২৮ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ২-৬ সেণ্টিমিটার করে কমতে থাকে। ৩১ জুলাই থেকে আবার ২-৪ সেণ্টিমিটার করে বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার(৩ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত গত ২৪
ঘণ্টায় যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই, বংশাই, লৌহজং, ফটিকজানী ও নিউ ধলেশ্বরী নদীর পানি গড়ে ৩ সেণ্টিমিটার করে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ার কারণে বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।


সরেজমিনে জানা যায়, গোপালপুর উপজেলার চাতুটিয়া, চরভরুয়া, নলিন; ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, নলশিয়া, ন্যাংড়া বাজার, রায়ের
বাশালিয়া, কুঠিবয়ড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, পাটিতাপাড়া, সারপলশিয়া, অর্জুনা, জগৎপুরা, বাসুদেবকোল, রামাইল, মেঘারপটল; কালিহাতীর আলিপুর,
সিঙ্গুলি, হাট আলিপুর, বেলটিয়া, শ্যামশৈল, সলিল গোবিন্দপুর, কদিম হামজানী; সদর উপজেলার চরপৌলি, কাকুয়া, মাহমুদনগর, কাতুলী; নাগরপুরের ধুবুরিয়া, পশ্চিম সলিমাবাদ, পশ্চিম
তেবাড়িয়া, খাস ঘুনিপাড়া, পাইকশা মাইজাইল, বলরামপুর, বাদে কাকনা, কৃষ্ণ দিয়ার কুল, নিশ্চিন্তপুর, টাটি নিশ্চিন্তপুর, ফয়েজপুর, বাককাটারি, বাজুয়ার টেক, ছিটকি বাড়ি এবং
মির্জাপুর উপজেলার বংশাই-ঝিনাই নদীর ভাঙনে ফতেপুর, থলপাড়া, বৈল্যানপুর, হিলড়া আদাবাড়ি বাজার, গোড়াইল, গাড়াইল, পুষ্টকামুরী পুর্বপাড়া, বাওয়ার কুমারজানী, ত্রিমোহন, বান্দরমারা,
যুগিরকোপা, রশিদ দেওহাটা চাকলেশ্বরসহ ১০-১২টি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ঝিনাই নদীর এই ভাঙনে কুর্নি-ফতেপুর পাকা সড়ক এক টাকার বাজার নামক স্থানে বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ফলে মির্জাপুর উপজেলা সদরের সাথে ভাঙন কবলিত এলাকার উত্তরাংশের সরাসরি সড়ক
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই অংশের লোকজন বিকল্প হিলড়া-আদাবড়ি সড়ক দিয়ে চলাচল করছে।


মির্জাপুরের লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন জানান, বংশাই নদীর থলপাড়া ব্রিজ, ত্রিমোহন এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা একাব্বর হোসেন ব্রিজ, কোদালিয়া লতিফপুর ব্রিজ, হাটুভাঙ্গা ব্রিজ, লৌহজং নদীর উপর নির্মিত গুনটিয়া ব্রিজ, বরাটি এলাকায় বাবু দুঃখীরাম রাজবংশী ব্রিজ, পুষ্টকামুরী ব্রিজ, পাহাড়পুর ব্রিজ, বহুরিয়া এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নুরু ব্রিজ এবং ওয়ার্শি ব্রিজ নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে।


ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা এলাকায় দেখা যায়, ভাঙনে বসতভিটা নদীর পেটে চলে যাওয়ায় মানুষ তাদের ঘরবাড়ি সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। তাদের
কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও কেউ কেউ সড়কের পাশে আশ্রয় নিচ্ছেন। মাটিকাটা গ্রামের ভাঙনের শিকার ৯৬ বছর বয়সী হাসেম আলী মুন্সী জানান, যমুনার ভাঙনের
শিকার হয়ে তিনি কয়েক বছর আগে ফসলি জমির শেষ সম্বলটুকু হারিয়েছেন। ১০-১১ বার বাড়িঘর সরিয়েছেন। এখন রাস্তার পাশে রয়েছেন।

স্থানীয় গৃহবধূ লাভলী বেগম জানান, কয়েক দিন ধরে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যমুনা নদীর মাটিকাটা অংশে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বসতভিটার অর্ধেকের বেশি নদীতে চলে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে বাকিটুকুও যমুনা গ্রাস করবে। তিনি দুইদিন ধরে ঘর ও আসবাবপত্র সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন।


নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাসুদুল হক মাসুদ জানান, যমুনা নদীর ভাঙনের ফলে অসংখ্য বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনরোধে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা
পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলা হবে।


নাগরপুর উপজেলার পশ্চিম সলিমাবাদের আব্দুল আওয়াল মোল্লা জানান, কয়েক বছরের নদী ভাঙনে তিনি সব জমিজমা হারিয়েছেন। এবার বসতবাড়িও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তার মতো অনেক পরিবার নদী ভাঙনে সব হারিয়ে পথে বসেছে।


একই গ্রামের গৃহবধূ মজিদা খাতুন জানান, তার বাড়ি পাঁচবার নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। সব হারিয়ে তার স্বামী এখন ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালান। তিনি জানান, নদী আর যেন না
ভাঙে- এজন্য স্থায়ী বাঁধ চান তিনি।


সলিমাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান সাহিদুল ইসলাম জানান, সলিমাবাদ সহ আশপাশের ইউনিয়নের তিন শতাধিক পরিবার সম্প্রতি নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে। এছাড়া ৪-৫ বছর ধরে ভাঙনে সহ¯্রাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিবছরই যমুনার ভাঙনে মানুষ ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারাচ্ছেন। নদী ভাঙন রোধে তারা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী বাঁধের দাবি করছেন।


টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নতুন করে ভাঙন
শুরু হওয়ায় তারা ভাঙনরোধে আরও বেশি জিওব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন। কয়েকটি এলাকায় স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে- অনুমোদন পেলে কাজ
শুরু করা হবে।