দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা চালু 

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৩০ | অনলাইন সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রায় ২০ বছর পরে ব্যাক্তি উদ্যোগে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা চালুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। কারখানাটি চালু হওয়ায় রেশম চাষীদের সাথে আরও ১০ হাজারের অধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। 


বৃহস্পতিবার (৩ আগষ্ট) দুপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে কারখানাটির উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এমপি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুনাংশু দত্ত টিটো, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান প্রমুখ।


কারখানায় উৎপাদিত মসৃণ সিল্ক কাপড় আবারো দেশ ও দেশের বাইরে রফতানির আশা থেকে পাঁচ বছরের জন্য ৮ লাখ ১০ হাজার টাকায় কারখানাটি ইজারা নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সুপ্রিয় গ্রুপ।


রেশম বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ স্থানীয় বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঠাকুরগাঁও শহরের গোবিন্দনগর এলাকায় ৩ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর রেশম কারখানাটি স্থাপন করে। পরে ১৯৮১ সালের ৩০ জুন সরকারি সিদ্ধান্তে রেশম কারখানাটি রেশম বোর্ডের নিকট হস্তান্তর করা হয়। 


কারখানাটিতে ২০টি রিলিং বেসিন, ৩টি শক্তিচালিত তাঁত, ১৯টি হস্তচালিত তাঁত ও প্রয়োজনিয় যন্ত্রপাতি সংস্থাপিত আছে। কারখানাটির চলতি মূলধন না থাকায় কারখানা পরিচালনার যাবতীয় অর্থ বোর্ডের উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ হিসেবে প্রদান করা হয়।


১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সালে ১৬৩.৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বিএমআরই প্রকল্পের অধীনে কারখানাটির ভবন বর্ধিতকরণসহ অতিরিক্ত ২০টি শক্তিচালিত তাঁতসহ কিছু যন্ত্রপাতি সংস্থাপিত হয়। কিন্তু আবর্তক তহবিলের অভাবসহ নানাবিধ কারণে কারখানাটি পরিচালনা সম্ভব হয়নি। ২০০২ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ মাস শ্রমিকদের মজুরি প্রদান  করতে না পারায় ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্মরত ৮৬ জন কর্মচারীকে গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।


কারখানাটিতে দীর্ঘদিন কাজ করে আসা একাধিক ব্যক্তি বলেন এই রেশম কারখানায় দীর্ঘ দিন চাকরি করেছি। ২০০২ সালে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়, তারপর থেকে আমরা বেকার। কারখানাটি আবারও চালু হলে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।


সাইদুর রহমান বাবু নামের এক রেশন শ্রমিক বলেন, আরডিআরএস বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্দোলন করে ১৯৮১ সালে সরকারিভাবে কারখানাটিকে জাতীয়করণ করে। মাঝে অনিয়মের কারণে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়, পরবর্তীতে সরকার আবারও জাতীয়করণ করলেও ২০০২ সালে পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবারও নতুন করে চালু হওয়ায় আমরা সবাই আনন্দিত।


সুপ্রিয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বাবলুর রহমান বাবলু বলেন, গত মে মাসে আমরা এই রেশন কারখানাটি লিজ নিয়েছি। কারখানাটি চালু করতে পেরে আমরা খুব আনন্দিত। কারখানাটি চালু হওয়ার ফলে প্রায় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে করে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে।


রংপুর অঞ্চলের উৎপাদন কর্মকতা আবুল কালাম আজাদ বলেন ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাঁচ বছরের জন্য সুপ্রিয় এন্টারপ্রাইজকে লিজ দেওয়া হয়েছে। তারা শুধু ভবন এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারবে।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা রেশম কারখানাটি অবশেষে চালু হলো। কারখানাটি চালুর ফলে এখানে প্রায় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থার সৃষ্টি হবে। দেশ ও দেশের বাইরে ঠাকুরগাঁওয়ের উৎপাদিত রেশমের বেশ চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।