৭৮ বছর বয়সে ১ম বিয়ের পিঁড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক 

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৪০ | অনলাইন সংস্করণ

  নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

চিরকুমার আর থাকা হলো না ময়মনসিংহ নান্দাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক ফকিরের। শেষ পর্যন্ত ৭৮ বৎসর বয়সে সহপাঠী এবং স্বজনদের অনুরোধে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক। তিনি উপজেলা আচারগাঁও ইউনিয়নের মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে। 


জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক ফকির স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে আশির দশকে পাশ্ববর্তী কন্দুয়া উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের সাত বছর বয়সী এতিম শিশু গোলাপ মিয়াকে এনে লালন-পালন করেন। উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করান তিনি। নিজ অর্থায়নে নান্দাইল বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থা করে দেন। গোলাপ মিয়ার সংসারে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে জন্ম নেয়। গত চার বছর আগে গোলাপ মিয়া আকস্মিক মারা যান। গোলাপ মিয়ার জীবদ্দশায় এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি নিজে। তার মৃত্যুর পর আরেক মেয়েকে বিয়ে দেন নুরুল হক ফকির। অনেকটাই ওই সংসারের হাল ধরেন নূরুল হক ফকির। তার স্ত্রী-সন্তান না থাকায় গোলাপ মিয়া নান্দাইলে তাকে দেখাশোনা করতেন। গোলাপ মিয়ার প্রতিও নূরুল হকের ছিল অগাধ ভালোবাসা। যৌবন পেরিয়ে নূরুল হক এখন বৃদ্ধ। চিরকুমার থাকারই ছিল নূরুল হকের ধীর প্রতিজ্ঞা।

 
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক ফকিরের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচেষ্টায় গোলাপের সন্তানদের সম্মতিতে বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) নান্দাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে মৃত গোলাপের স্ত্রী মিনা আক্তার (৪৫) সাথে বিয়ে হয়। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে মিনা আক্তার এবং সন্তানেরা খুশি। 


নান্দাইল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মাজহারুল হক ফকির, মুক্তিযোদ্ধা সামছুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান মাস্টার, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেনসহ আরও অনেকের উপস্থিতির মধ্যদিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়।


বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক ফকির বলেন, আত্মীয়-স্বজন সহ অনেকেই চেষ্টা করেছে বিয়ে করাতে পারেনি। চেয়ে ছিলাম চির কুমারই থেকে যাব। কিন্তু বয়সের বার্ধক্য আসায় নিজেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।


সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাজহারুল হক ফকির বলেন, আমরা একটা ইতিহাস করলাম। নিজেরাও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলাম। চিরকুমার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সকলে মিলে রাজি করিয়ে বিয়েটা সম্পন্ন করলাম। এখন নুরুল হক একজন পরিপূর্ণ ব্যক্তি। তার জন্য দোয়া রইল।