স্বাধীনতার ৫২ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা আরজ আলীর

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

  বরিশাল ব্যুরো

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকুরীকালীণ সময়ে ছুটিতে নিজবাড়ি এসে আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান না করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ মাতৃকার টানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত আধুনা গ্রামের মৃত এয়াছিন বয়াতীর ছেলে বাসিন্দা আরজ আলী বয়াতী। 

সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষন থাকায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের শিখিয়েছিলেন যুদ্ধের কলাকৌশল। ছিলেন সম্মুখ সারির এক বীরযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন বলে জানায় আরজ আলীর সহযোদ্ধারা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি স্বীকৃতি।

আরজ আলী বয়াতীর দিনমজুর ছেলে নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা আরজ আলী বয়াতী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়ার সময় ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন আমার বাবা আরজ আলী। 

সেসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য বার বার বলা হলেও তিনি (আরজ আলী) পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান না করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দেশ রক্ষায় যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেন। বাটাজোর এলাকায় পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহিদ হন আমার বাবা আরজ আলী। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর ত্রান ও কল্যান তহবিল থেকে এক হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেছিলেন আমাদের পরিাবারকে। এমনকি ২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীণ সময়ে তার কার্যালয় থেকেও প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীণ একান্ত সহকারী সচিব আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম স্বাক্ষরিত একটি অনুদানের চেক আমার মা লালমোন নেছার নামে পাঠানো হয়। পরিবারের পক্ষে আমার মা চেকের টাকা উত্তোলণ করেন।

তিনি আরও বলেন, আমার মা জীবিত থাকাকালীণ আমার মুক্তিযোদ্ধা পিতার নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। ২০১০ সালে আমার মা মৃত্যুবরন করেন। বাবার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের কাগজপত্র মায়ের কাছে গচ্ছিত ছিলো। যা এতোদিন খুঁজে পাইনি। এজন্য গেজেটভুক্তের আবেদন করতে পারিনি। সম্প্রতি কয়েকটি কাগজ আমার চাচার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছি। শহিদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আরজ আলী বয়াতীর নাম গেজেট ভুক্ত করার জন্য তিনি (নজরুল) বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুজিব বাহিনীর কমান্ডার আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বাটাজোর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কাদের সহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, আরজ আলী আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। তার সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ থাকায় যুদ্ধে আমাদের গাইড করতেন।

বাটাজোর স্কুলের পাশে পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে আমাদের সহযোদ্ধা আরজ আলী শহিদ হয়েছিলেন। আমরা এতোদিন জানতাম আরজ আলীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত আছে। কিন্তু এখন তার সন্তানরা এসে বলে আমার বাবার নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আরজ আলীর নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবী জানাই।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার বলেন, এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আবেদন করলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সত্যত্য পেলে গেজেটভুক্তের জন্য সুপারিশ করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবো।