কর্মকর্তার বদলীতেই বাক্স বন্দী উদ্যোগ পুরাতন বাদ নতুন পরিকল্পনায় ব্যস্ত ট্যুরিষ্ট পুলিশ
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ২০:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
দেশি-বিদেশী পর্যটকদের সমুদ্র নগরী কক্সবাজার ভ্রমন নিরাপদ , স্বস্তিদায়ক ও আনন্দমুখর করতে গেল বছর পর্যটন সংশ্লিষ্ঠদের অনলাইন ডাটা বেইজ তৈরি, ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার, কটেজ জোনে সিসিটিভি স্থাপন সহ নানা উদ্যোগ গ্রহন করেছিল ট্যুরিষ্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন।
কিন্তু সেসময় ট্যুরিষ্ট কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বদলী হয়ে গেলে সেসব উদ্যোগগুলো ১০ মাসেও আর আলোর মুখ দেখিনি। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতে না পারলেও নতুন কিছু উদ্যোগের কথা জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট নানা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২২ সালে মে মাসে পর্যটকদের ভ্রমন আনন্দ দায়ক করতে নড়েচড়ে বসে ট্যুরিষ্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন। শুরু করে দরপাকড়। সেসময় সংস্থাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিমের নেতৃত্বে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে শতাধিক দালাল, ছিনতাইকারী ও অপহরণকারীদের গ্রেফতার করাির পাশাপাশি পর্যটকদের হারিয়ে যাওয়া মালামাল ও চুরি হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করেছিল। এছাড়া পর্যটন জোনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সমুদ্র শহরে আগত অতিথিদের ভ্রমনকে হয়রানি থেকে বাঁচাতে আয়োজন করেই ঘোষনা করা হয়েছিল নানা উদ্যোগের কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবজাতক শিশু ও মায়েদের কথা চিন্তা করে ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কলাতলী পয়েন্টে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার’ চালু করেছিল ট্যুরিষ্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন। সেসময় ঘোষনা দেয়া হয়েছিল সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টেই করা হবে একটি করে কর্ণার। সেই ঘোষনা তো বাস্তবায়ন হয়নি উল্টো বন্ধ করা হয়েছে কলাতলীর কর্ণারটিও। একই বছরের ৯ আগষ্ট ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও কটেজ মালিক যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষনা দেন, অপরাধীদের নজরদারীতে রাখতে কটেজ জোনের গুরুত্বপূর্ণ ২৯ টি পয়েন্টে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা। আর সিসি ক্যামেরা সমস্ত খরচ বহন করবে কটেজের জমি ও ভবন মালিকরা। তবে ঢাল ঢোল পিটিয়ে নেয়া সেই উদ্যোগ আর বাস্তবায়িত হয়নি। একই সময়ে পর্যটকদের হয়রানি থেকে বাঁচাতে অটোচালকদের প্রশিক্ষণ ও আইডি এবং পোশাক প্রদান, ফটোগ্রাফারদের নিয়ে কর্মশালা, সমুদ্র সৈকত থেকে ভিক্ষুক ও ভ্রাম্যমান হকারদের সরানো সহ বেশ কয়েকটি পর্যটক বান্ধব উদ্যোগ গ্রহন করেছিল ট্যুরিষ্ট পুলিশ। কিন্তু পর্যটকদের সুবিধার্থে গৃহিত একটি পদক্ষেপও বাস্তবায়ন করা হয়নি। উল্টো এই সময়টাকে সমুদ্র সৈকতে বেড়েছে টিকটকারদের ভীড়, বখাটেদের আড্ডা, ভিক্ষুক- হকারের উৎপাত, টমটম চালকদের দৌরাত্ব্য, ছিনতাই সহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কাজ।
খোজঁ নিয়ে আরো জানা যায়, ট্যুরিষ্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম পর্যটন বান্ধব এসব উদ্যোগ গ্রহন করেছিল। কিন্তু গতবছরের অক্টোবরে তিনি বদলী হয়ে চলে যান ফরিদপুর জেলা পুলিশে। এরপর এসব উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি। উল্টো তাঁর গৃহিত অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
সূত্রটি আরো জানায়, ট্যুরিষ্ট পুলিশের নিয়মিত অভিযানের কারনে যেসব অপরাধীরা সেসময় গা ঢাকা দিয়েছিল। এখনা তারা ফের পর্যটন জোনে ফেরত এসেছে। শুরু করেছে অবৈধ ও অনৈতিক কাজকর্ম। কিন্তু এসব রোধে আগের মত পর্যটন জোনে ট্যুরিষ্ট পুলিশ কোন কাজই চোখে পড়ছেনা। উল্টো অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছু অর্থ লোভী কর্মকর্তার সহযোগিতায় সেসময় দায়িত্ব পালন করা ট্যুরিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলদের নানাভাবে হয়রানি করছে।
এ ব্যাপারে পর্যটন ব্যবসায়ী ও কক্সবাজার শহরের ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহেদ আলী বলেন, গেল বছর ট্যুরিষ্ট পুলিশের নেয়া সিসি টিভি স্থাপন সহ সবগুলো উদ্যোগই ছিল পর্যটক বান্ধব। এই কারণে আমাদের সমর্থণও ছিল। কিন্তু কেন এই উদ্দ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হয়নি আমার জানা নেই।
কক্সবাজার রিপোর্টাস ইউনিটির সাধারন সম্পাদক সায়ীদ আলমগীর বলেন, সাংবাদিকে ডেকে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাল ঢোল পিটিয়ে পর্যটকের সুবিধার্থে নানা উদ্যোগের ঘোষনা দিয়েছিলেন ট্যুরিষ্ট পুলিশ। এরমধ্যে কিছু উদ্যোগ তখন বাস্তবায়ন হলে পরে তদারকির অভাবে সেগুলো বন্ধ গেছে। আর কিছু উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
তিনি আরো বলেন, ট্যুরিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা বদলীর কারণেই এমন সুন্দর উদ্যোগগুলো আর আলোর মুখ দেখেনি।
এ বিষয়ে সেসময়ে ট্যুরিষ্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলাম। তখন থেকেই পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে কিছু পরিকল্পনা করি। পরে সুযোগ পেয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নও করি। বদলী হওয়ায় অনেকগুলো পদক্ষেপ বাস্তবায়িত করতে পারিনি। তবে সেগুলো তো পরবর্তী কর্মকর্তাদের বাস্তবায়নের কথা। তাদের হয়ত ভিন্ন প্ল্যান থাকতে পারে, সেটা আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অর্থাভাবে সেসময়ে নেয়া উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। মূলত সেসব উদ্যোগগুলো স্পন্সের মাধ্যমে করার কথা। কিন্তু প্রথমে কথা দিলে পরে স্পন্সররা সিসিটিভি সহ অন্যান্য কাজ করতে আগ্রহ দেখায় নি। তবে কোন মা চাইলে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্য আমরা বিভিন্ন স্পটে থাকা গোলঘরগুলো তাদেরকে ছেড়ে দেই। এছাড়া স্পন্সরের মাধ্যমে আমরা সৈকতে তিনটি কন্ট্রোল রুম করেছি। এছাড়া কয়েকদিনের মাধ্যমে সমুদ্র সৈকতে সর্তকতা বানী সংবলিত সাইনবোর্ড দেয়া হবে। তাছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য আমরা স্পন্সর জোগাড় করেছি। জায়গার জন্য জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি খুব শ্রীঘই তা বাস্তবায়ন হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু সিসিটিভি পাঠানো হয়েছে তবে এগুলো ক্যাবল সিস্টেম। কিন্তু আমাদের চাওয়া ওয়াইফাই পরিচালিত। তাই আমরা সিসি ক্যামেরা ফেরত পাঠাব। পরে নতুন ক্যামেরা পেলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।
এএসপি আরো বলেন ইচ্ছেকৃতভাবে কোন পুলিশকে হয়রানি করার বিষয়টি সত্য নয়। যদি কারও বিরুদ্ধে কোন সুনিদির্ষ্ট অভিযোগ থাকে সেক্ষেত্রেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।