শিশু বলাৎকারের অভিযোগে বৃদ্ধকে ঝুলিয়ে নির্যাতন

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৪২ | অনলাইন সংস্করণ

  পিরোজপুর প্রতিনিধি

পিরোজপুরের নেছারাবাদে (স্বরূপকাঠি) দ্বিতীয় শ্রেনীর এক মাদ্রাসার ছাত্রকে বলাৎকারের দায়ে মো. জাকির হোসেন (৫২) নামের এক বৃদ্ধকে পা বেঁধে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। 

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাহমুদকাঠি গ্রামে। জানা গেছে, ওই গ্রামের মো. জাকারিয়ার মাদ্রাসা পড়ুয়া ৯ বছর বয়সের ছেলেকে একই এলাকার দিনমজুর জাকির হোসেন বিভিন্ন সময় নানা প্রলোভন দেখিয়ে বলাৎকার করে আসছিলো। ছেলেটি সপ্তাহখানেক পূর্বে ঘটনাটি তার পরিবারকে জানায়। 

এনিয়ে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি এলাকার কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে জানিয়ে বিচার দাবী করেন। তারা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নিলে শিশুটির পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে গত তিনদিন ধরে জাকিরকে মারার জন্য খুঁজতে থাকে। জাকির তাদের ভয়ে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকে। 

বুধবার (৯ আগস্ট) ভোররাতে জাকির ভয়ে তাদের বাড়ি সংলগ্ন মাহমুদকাঠি ইছামউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। সকালে খবর পেয়ে শিশুটির পিতা জাকারিয়া ও দাদা মো. মোস্তফা ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে জাকিরকে তালাবদ্ধ করে রাখে। জাকির নিজেকে রক্ষার্থে জানালা ভেঙ্গে পালিয়ে যাবার চেষ্টাকালে শিশুটির পিতা জাকারিয়া ও দাদা মোস্তফা ওই জাকিরকে সেখান থেকে বের করে দুপা বেঁধে বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঝুলিয়ে তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। 

এসময় জাকারিয়ার স্ত্রী শিমু বেগম তার স্বামি ও শশুরকে নিভূত করতে এগিয়ে আসলে লাঠির আঘাতে সেও মারাত্মক আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহত জাকিরকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে জাকারিয়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি তার স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে বরিশালে আছেন বলে জানান। শিশুটির দাদা মো. মোস্তফা ওই জাকিরকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন জাকির খুব খারাপ লোক কেউ তার বিচার না করায় আমরা তাকে মেরেছি। তাকে মারার সময় আমার পুত্রবধু আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। 

নির্যাতনের শিকার জাকির হোসেন শিশুটিকে বলাৎকারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি শিশুটিকে আদর করেছি মাত্র। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জাকারিয়া ও তার পিতা আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। এ ব্যাপারে মাহমুদকাঠি ইছামউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তৌফিকুজ্জামান জানান, যে লোকটিকে নির্যাতন করা হয়েছে সে আমার বিদ্যালয়ের কোন স্টাফ নন। 

তাকে উদ্দেশ্য করে আমার বিদ্যালয়ে তালা মারা এবং বিদ্যালয়ে বসে নির্যাতন করা নিন্দনীয়। আমি বিষয়টি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদকে জানিয়েছি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। 

ঘটনার বিষয়ে আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে আমি ঢাকায় ছিলাম। আজকে বাড়িতে এসে ঘটনাটি শুনে আমি ওই এলাকায় যাই। উভয় পরিবারের সাথে কথা বলেছি। এ ধরনের ঘটনার বিচার করা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। 

জাকির যদি শিশুটিকে বলাৎকার করে থাকে সেটি নিন্দনীয় সেজন্য পুলিশের মাধ্যমে জাকিরকে বিচারের আওতায় আনা যেতো। কিন্তু তাকে এভাবে অমানবিক নির্যাতন করাটা মোটেই ঠিক হয়নি।