শালিশ বৈঠকে গৃহবধুকে নির্মম নির্যাতন, ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার ৪
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ২০:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপর প্রতিনিধি
চাঁদপুরের কচুয়ায় স্বামীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করার অপরাধে শালিশ বৈঠকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে আকলিমা বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় ইউপি সদস্যসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কচুয়া থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১০ আগষ্ট) দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এর আগে বুধবার (৯ আগষ্ট) দিনগত রাতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-উপজেলার সিংআড্ডা গ্রামের ইউপি সদস্য ফরিদ আহমেদ (৩৫), জসিম উদ্দিন (৪৫), আনোয়ার হোসেন (৫০) ও নবীর হোসেন (৪০)।
নির্যাতনের এমনি একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় তা ভাইরাল হয়। গৃহবধুকে নির্যাতন করার সময় এক যুবক তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীকে দিলে তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন। মুহুর্তের মধ্যে ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ আহমেদ এর উপস্থিতিতে আলমগীর হোসেন নামের এক যুবক গৃহবধু আকলিমাকে দেশীয় লাঠি (মোত্রা) দিয়ে তার পিঠে উপর্যিপুরি মারধর করছে। আশপাশের দু’একজন বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাতে পাত্তা না দিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। পেটানোর সময় দুটি মোত্রা ভেঙে গেলে আলমগীর চেয়ার দিয়ে পেটাতে আসে। এ দৃশ্য যেন মধ্যযুগের বর্বরতাকেও হার মানায়।
অবিলম্বে এ নরপিচাশদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভিডিও পোস্টে কমেন্ট করা ব্যক্তিরা। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় মামলা করেন গৃহবধু আকলিমা।
কচুয়া থানার মামলার বিবরণ ও গৃহবধু আকলিমা জানান, উপজেলার সিংআড্ডা গ্রামের মজুমদার বাড়ির আব্দুর রহিমের সাথে তার বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে স্বামী মৃত্যু বরণ করেন। ৫দিন পূর্বে অর্থাৎ গত ৪ আগষ্ট একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একই গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির আলমগীর হোসেকে বিয়ে করেন আকলিমা।
বিয়ে করাকে কেন্দ্র করে বুধবার (৯ আগস্ট) কচুয়া উত্তর ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফরিদ আহমেদের বাড়িতে শালিস বৈঠক বসে। শালিস বৈঠকে আকলিমার প্রথম পক্ষের ভাসুর আনোয়ারের ছেলে আলমগীর শালিস চলাকালীন সময়ে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। পরে আকলিমার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করান।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহীম খলিল জানান, ঘটনার দিন রাতে থানায় অভিযোগ করলে থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক ইউপি সদস্য ফরিদ আহমেদ ও তার ভাই জসিমসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত চার জনকে প্যানেল কোড সংশ্লিষ্ট ধারায় বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে চাঁদপুরের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী আলমগীর হোসেন পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।