চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসার ঠিকানা। এ মহান নেতা ছিলেন দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত গণমানুষের মুক্তির দূত। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য তাঁর ভাষণের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, রাজনীতির মহাকবি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট হায়েনাদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট হায়েনার দল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তারা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধু নিঃশেষ হয়ে যাবেন, বাঙালি জাতি তাঁকে ভুলে যাবে; কিন্তু হায়েনাদের সে দুরাশা পূরণ হয়নি। উপাচার্য বলেন, ব্যক্তি মুজিবের মৃত্যু হলেও মুজিব আদর্শের মৃত্যু হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির হৃদয় থেকে কখনও মুছে ফেলা যাবেনা। এ বিশ^নেতা যুগ যুগ ধরে বাঙালির হৃদয়ে চিরঅ¤øান হয়ে থাকবেন। উপাচার্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
শোক দিবসের কর্মসূচি হিসেবে সকাল সাড়ে ১০ টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি শোক র্যালি চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। পরে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চবি অনুষদ সমূহের ডিনবৃন্দ, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, চবি অফিসার সমিতি, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস), চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, চবি কর্মচারী সমিতি, চবি কর্মচারী ইউনিয়ন, চবি বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কীর্তি এবং শোকাবহ ১৫ আগস্ট’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন চবি আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ এবং সঞ্চালনা করেন চবি প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার। আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন চবি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন চবি পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অরূপ বড়–য়া ও পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন চবি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জেসী ডেইজী মারাক। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার এবং ঐদিন শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মো. দানেশ মিয়া, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর, চবি শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম, শাহজালাল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস) এর সভাপতি প্রফেসর ড. জহুরুল আলম, চবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মশিবুর রহমান, অফিসার সমিতির সভাপতি রশীদুল হায়দার জাবেদ, কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. সুমন ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী হোছাইন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণকারী অন্যান্য শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২ টায় চবি কেন্দ্রীয় মন্দিরে ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য শহীদদের স্মরণে এবং দেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও মঙ্গল কামনায় গীতাপাঠ ও সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
চবি প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ ও আবাসিক শিক্ষকবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।