কক্সবাজারের টেকনাফের গহীন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরীর কারখানা ও ডাকাত দলের আস্তানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব ১৫। যেখানে রাতভর অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামাদি সহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার কর হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালীর পশ্চিমের গহীন পাহাড়ে চলে এ অভিযান।
অভিযানে গ্রেপ্তাররা হলেন, রঙ্গিখালী এলাকার গুরা মিয়ার ছেলে ফয়সাল উদ্দিন (৪০), পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ার নজির আহমদের ছেলে মো. বদি আলম (৩৫), দক্ষিণ আলীখালীর জানে আলমের ছেলে মো. কবির আহামদ (৪৩), পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ার বাছা মিয়ার ছেলে মো. সৈয়দ হোসেন (৩২), পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়ার মৃত বনি আমিনের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসন (৩৫), উলুছামারি কুনারপাড়ার জাহিদ হোসেনের ছেলে মো. মিজানুর রহমান (২৬)।
এসময় ২টি একনলা বড় বন্দুক, ৪টি এলজি, ১টি অর্ধনির্মিত এলজি, ৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১০ রাউন্ড রাইফেলের তাজা কার্তুজ, ১ টি ড্রিল মেশিন, ১ টি আগুন জ্বালানো মেশিন, ২ টি লেদ মেশিন, ২ টি বাটাল, ১ টি শান দেয়ার রেত, ২ টি লোহার পাইপ, ২টি প্লাস, ১টি কুপি বাতি এবং ৩টি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় কক্সবাজারস্থ র্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী প্রেরিত এক বার্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ওই বার্তা বলা হয়েছে, র্যাবের একটি দল ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে পাহাড়ে একটি ডাকাত দলের আস্তানা এবং অস্ত্র তৈরীর কারখানা আবিষ্কার করে। অভিযাে ডাকাত দলের সদস্যরা র্যাবের উপর গুলি বর্ষন করে এবং এদিক-ওদিক দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় পলায়নকালে ধাওয়া করে ফয়সাল বাহিনীর মূলহোতা ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফয়সালের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্র, সরঞ্জামন উদ্ধার করে অন্যাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের বার্তায় জানানো হয়েছে, ফয়সাল ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা এবং হত্যা’সহ নানাবিধ অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও দূর্গম পাহাড়ী এলাকা হওয়ার সুবাদে সেখানে গড়ে তুলে অস্ত্র তৈরীর কারখানা। ফয়সাল বিভিন্ন সময়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে অন্যান্য সন্ত্রাসী চক্রের নিকট অস্ত্র সরবরাহ’সহ নিজেদের তৈরীকৃত আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা তাদের অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় গহীন পাহাড়ে তৈরীকৃত আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেত। ডাকাত দলটি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান হতে অপহরণ করে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে অপহৃত ভিকটিমদের নিয়ে তাদের আস্তানায় বন্ধি করে রাখতো এবং ভিকটিমের পরিবারের নিকট মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবী করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ভিকটিমের উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন এবং মুক্তিপণের বিনিময়ে ভিকটিমদের ছেড়ে দেয়া হতো, চাহিদা মতে মুক্তিপণ না পেয়ে ইতোপূর্বে কয়েকজন ভিকটিমকে হত্যা পর্যন্ত করেছে বলে অপরাধীরা জানায়।
ফয়সাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৩টির অধিক মামলা, বদি আলমের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা, কবিরের বিরুদ্ধে ২টি, সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি এবং মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করে গ্রেপ্তারদের টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে বার্তা জানানো হয়েছে।