ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পেকুয়ায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

পেকুয়ায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামা ও বারবাকিয়া ইউনিয়নে ভূমিহীন এবং গৃহহীনদের জন্য ৩৬টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অতি নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ঘর তৈরী করায় উপকারভোগীদের মাঝে এখনো পর্যন্ত ঘরগুলো হস্তান্তর করতে পারেনি উপজেলা ভূমি অফিস। ঘরের নকশা অনুযায়ী ঘর তৈরী না করে পেকুয়ার ইউএনও ও এসিল্যান্ড নিজেদের ইচ্ছেমতো ঘর তৈরী করায় হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘর তৈরীতে নিয়োজিত রাজমিস্ত্রী ছৈয়দ আলম সংবাদ সম্মেলন করে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমার বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলেছেন। এদিকে ৩৬টি ঘর তৈরীতে অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ঘরগুলোতে লাগানো লাল রংয়ের অতি নিম্নমানের টিন রাতারাতি পরিবর্তন করে লাল রংয়ের টিন লাগানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের শরৎ ঘোনা গ্রামে ১০টি, একই ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা গ্রামে ভোলা খালের চরে ১৫টি ও সোনালী বাজার এলাকায় ১টি, বারবাকিয়া ইউনিয়নের বুধামাঝির ঘোনা গ্রামে ৫টি ও একই ইউনিনের মগপাড়া গ্রামে ৫টিসহ সর্বমোট ৩৬টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য তৎপর ছিল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ৩৬টি ঘর নির্মাণের শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অতি নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করা হলে রাজমিস্ত্রী ছৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা।

সম্প্রতি এসব ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশাসনের উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের দফতরে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। অভিযোগ দায়েয়ের পর অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেন পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.জাহিদুল ইসলাম। তাঁরা ঘর তৈরীর অনিয়মের সব দোষ রাজমিস্ত্রী ছৈয়দ আলমের উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালায়। এরই মধ্যে রাজমিস্ত্রী ছৈয়দ আলম সংবাদ সম্মেলন করে পেকুয়ার ইউএনও’র বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে ইউএনও’র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় রাজমিস্ত্রী ছৈয়দ আলমকে নানাভাবে হয়রানী করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেন ইউএনও এবং এসিল্যান্ড।

রাজমিস্ত্রী ছৈয়দ আলম মিস্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কনস্ট্রাকশনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমার বাড়ি চকরিয়া উপজেলার লাল ব্রীজ এলাকায়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শুরতে পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা ৩৬টি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রতি ঘর ২লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তৈরী করে দেওয়ার জন্য ইউএনও আমাকে দায়িত্ব দেয়। ইউএনও’র নির্দেশে আমি মগনামা ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৩৬টি ঘর তৈরীর কাজ করে দিই। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত আমি শ্রমিক নিযুক্ত করে ৩৬টি ঘর তৈরী করে দিয়েছি। প্রতিটি ঘর আমাকে ২লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে তৈরীর করে দেওয়ার জন্য ইউএনও পূর্বিতার চাকমা নির্দেশ দেওয়ায় আমি উনার কথামতো কাজ করে দিয়েছি। ৩৬টি ঘরের সর্বমোট বিল হয় ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু জুলাই মাস পর্যন্ত চেকের মাধ্যমে কয়েক ধাপে ইউএনও আমাকে ৭৪লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। আরো ১৬ লাখ টাকা ও ঘরের বেইজ ঢালাই বাবদ ৪লাখসহ সর্বমোট ২০ লাখ টাকা আমি ইউএনও’র কাছ থেকে পাওনা রয়েছি। ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করায় ইউএনও আমার ন্যায্য পাওনা আমাকে পরিশোধ করছেনা। এখন উল্টো পেকুয়ার ইউএনও এবং এসিল্যান্ড আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

স্থানীয়দের মতে, পেকুয়ার ইউএনও এবং এসিল্যান্ড গত কয়েকদিন ধরে বেশ তড়িগড়ি করেই অনিয়মের মাধ্যমে তৈরীকৃত ঘরগুলোতে ব্যবহৃত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী গোপনে সরিয়ে নিয়েছে। এসব ঘরের টিন খুলে নিয়ে নতুন ঠিন লাগানো হয়েছে। ঘরগুলোর মেঝেতে ইট বিছিয়ে উপরে সিমেন্ট-বালি মিশ্রিত প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল। এখন ঘরগুলোর মেঝের সিমেন্ট-বালির প্রলেপ তুলে নিয়ে সেখানে কংকর-বালি মিশ্রিত করে টেকসই ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। মগনামা ও বারবাকিয়ার ৩৬টি ঘর তৈরীতে দুর্নীতি ঢাকতে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড শ্রমিক নিয়োগ করে তড়িগড়ি করে কাজ বাস্তবায়নের ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহলে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা গ্রামে ১৫টি ঘর মির্মাণ করা হয়েছে ভোলা খালের চরে। প্রবাহমান খালের চরে ঘর নির্মাণ করায় গাইডওয়ালও দেওয়া হয়েছে। সাগরের সাথে সংযুক্ত ভোলা খালের চরে ঘর নির্মাণ করায় চলতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে নির্মিত ঘরগুলোর দক্ষিণ অংশে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। ঘর নির্মাণে অতি নিম্নমানের কাঠ, কংকর, ইট, টিন, সিমেন্ট ও বালি ব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে। এছাড়া মগনামা ইউনিয়নে ঘর বিতরণের জন্য প্রস্তুতকৃত উপকারভোগীদের তালিকা তৈরীতেও ব্যাপক স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক উপকারভোগীদের বসবাসের জন্য ঘর ও জমি থাকলেও উপজেলা ভূমি অফিস যাচাই-বাচাই না করে তাদের ভূমিহীন ও গৃহহীনের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত ঘর দেওয়ার জন্য তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।

মগনামা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলা উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, প্রবাহমান ভোলা খালের চরে মটকাভাঙ্গা ও শরৎঘোনা গ্রামে গৃহহীনদের ঘর বানানো হয়েছে। ফলে ভোলা খালের চরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে ঘরগুলোর একাংশ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

শনিবার এ প্রসঙ্গে জানার জন্য পেকুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোন ধরনের সাড়া দেয়নি। যার কারনে তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ঘর নির্মাণে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেকুয়ায় গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরীতে কোন ধরনের অনিয়ম করা হয়নি। প্রশাসনের অগোচরে রাজমিস্ত্রী নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাজমিস্ত্রী ছৈয়দ আলম কর্তৃক আমার বিরুদ্ধে আনীত ২০লাখ টাকা আত্মসাতে অভিযোগ ভিত্তিহীন। সে যতুটুক কাজ করেছে বিল পরিশোধ করেছি। তিনি উল্টো রাজমিস্ত্রী ছৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন। বক্তব্য নেয়ার এক পর্যায়ে ইউএনও প্রতিবেদকে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে কাগজপত্র দেখার অনুরোধ করেন।

অভিযোগ,সামগ্রী,নিম্নমান
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত