সাতক্ষীরায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে বাণিজ্যিকভাবে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩০ | অনলাইন সংস্করণ

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে বাণিজ্যিকভাবে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। উপরে হলুদ আর ভেতরে টকটকে লাল, মিষ্টি ও সুস্বাদু তরমুজ ঝুলছে কৃষকের মাচায়। অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে এর আবাদ। তালায় প্রথমবারের মতো মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় চাষকৃত গ্রীষ্মকালীন হলুদ, কালো ও সবুজ তরমুজ চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। আশানুরূপ ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। একই সঙ্গে বেশ লাভেরও আশা করছেন চাষীরা। 

কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় চলতি বছর ২৭ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর তরমুজ ফলন ভালো হওয়ায় দামেও বিক্রি করছেন কৃষকরা। 
তালা উপজেলার নগরঘাটা,ফুলবাড়ি,অভয়তলা,ভায়ড়াসহ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় চাষকৃত গ্রীষ্মকালীন হলুদ, কালো ও সবুজ তরমুজ চাষ। টুঙ্কিনারী, বুলেট কিং ও কানিয়া (বাংলালিঙ্ক) জাতের এসব তরমুজের কোনোটি বাজারজাতের সময় হয়েছে, কোনোটি এখনো জালি। খেতেও সুস্বাদু। 

তরমুজ চাষিরা জানান, উৎপাদন খরচ তুলনামুলক অনেক কম হওয়ায় অধিক লাভে তালা উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছে গ্রীষ্মকালীন হলুদ ও কালো তরমুজ চাষ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলার মাটি তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে আবাদ। 
তরমুজ চাষে সবমিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে পাইকাররা এসে দরদাম করে গেছে। তারা ৩৫-৪০ টাকা কেজি দিতে চায়। এ হিসেবে বিঘা প্রতি অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবে বলে জানিয়েছেন চাষীরা। এতে অন্যান্য ফসলের তুলনায় আমার কমপক্ষে ছয় গুণ লাভ হবে।

তালার বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষি বিভাগের প্রধান কৃষিবিদ নয়ন হোসেন বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে তরমুজ চাষ করে কৃষকেরা বেশ সফল। আমরা কৃষক পর্যায়ে তরমুজের বীজ, সারসহ সবধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অধিক লাভ হওয়ায় প্রতিবছর আবাদ বাড়ছে। কৃষকেরা ভালো লাভ পাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, পিকেএসএফের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টা থেকে বীজ সংগ্রহ করে তাদের পরামর্শে মালচিং পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে জমিতে বীজ রোপণ করেন কৃষকরা।

 তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের মাসুদ হোসেন, আব্দুল মতিন মাস্টার, আসাদুর রহমান, হাফিজুর রহমান, অভয়তলা গ্রামের আহসান হাবিব, বগা গ্রামের ফারুক হোসেনসহ একাধিক তরমুজ চাষিরা জানান,   গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছি। এজন্য মে মাসের শেষ সপ্তাহে বীজ রোপন করি। ইতোমধ্যে আমার ক্ষেত তরমুজে ভরে গেছে। তরমুজ বিক্রি শুরু করেছি। চাষিদের তরমুজ চাষে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে তরমুজ চাষের জন্য বীজ, মালচিং পেপার, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ এমনকি চাষাবাদের জন্য নগদ টাকাও দিয়েছে।

 কৃষরা আরও জানান, আমরা প্রথমে একটু সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেও এখন দেখছি আসলেই গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ অত্যন্ত লাভজনক। 
তেতুলিয়া গ্রামের ইকবাল হোসেনের মত শিপন বিশ্বাস, সাইফুল বিশ্বাস, শরিফুল বিশ্বাস, ভায়ড়া গ্রামে কৃষক রফিকুল ইসলাম,মুক্তার মহালদার, লিয়াকত মহালদারসহ আরও অনেকই চাষ করেছেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।

তালা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশ জানান, কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রথমবারেই তারা উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে। আশা করি মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের প্রযুক্তি এই এলাকায় আরও সম্প্রসারিত হবে।

 সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা জেলায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। তালায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সাফল্য বেশি পাওয়া গেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে। 
তিনি আরও বলেন, গেল বছর সাতক্ষীরায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ হয়েছিল ৮ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর চাষ হয়েছে ২৭ হেক্টর জমিতে।  গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের এই প্রযুক্তি আগামীতে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করছি।

এদিকে, কৃষকদের সরকারি ভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করলে তরমুজের আবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।