কক্সবাজার শহরের আবাসিক হোটেল কক্ষে হাত বেঁধে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুদ্দিনকে। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার দিকে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এবং মুখে মাস্ক দেয়া এক যুবককে সাথে নিয়ে এই হোটেলটিতে গিয়েছিলেন সাইফুদ্দিন। যে যুবককে রাত ৮ টা ১০ মিনিটের পর ওই কক্ষ ত্যাগ করে একা চলে গেছেন। হোটেলটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া এই দৃশ্যের যুবককে শনাক্ত করে জোর তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান, সোমবার বিকাল ৪ টা পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫ জনকে পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মুলত সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাওয়া সাদা পাঞ্জাবি ও মুখে মাস্ক দেয়া যুবককে শনাক্ত করতে এদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই যুবককে শনাক্ত করা সম্ভব হলে খুনের রহস্য পরিষ্কার হয়ে যাবে। দ্রæত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের হলিডের মোড় সংলগ্ন আবাসিক হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে হাত বাঁধা ও রক্তাক্ত সাইফুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুপুর আড়াইটার দিকে মরদেহটি আনা হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে।
নিহতের সাইফুদ্দিন কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে। তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের এক সময়ের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতিও।
ঘটনাস্থলে গিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ২০৮ নাম্বার কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহতের শরীরে ৩টি ছুরিকাঘাত ও অন্যান্য জখম পাওয়া গেছে। আর হাত নিহতের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে বাঁধা ছিল। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সহ নানা উৎস থেকে হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার রেজাউল করিম জানান, রোববার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে নিহত সহ ২ জন এসে ২০৮ নম্বর কক্ষে উঠেন। সোমবার সকালে তার সন্ধানে আসেন তার বন্ধুরা। বন্ধুদের সাথে নিয়ে কক্ষটিতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিলে খোলে যায়। খাটে রক্তাক্ত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। নিহত সাইফুদ্দিন প্রায়শ হোটেলে এসে রুম নিয়ে থাকতেন। হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ এবং পাশ^বর্তী আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভির ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এতে দেখা যায়, নিহত সাইফুদ্দিন সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে হোটেল সানমুনে আসেন। এরপর ওই যুবককে সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করেন ২০৮ নাম্বার কক্ষটিতে। সাথে থাকা যুবকের মুখে কালো রংয়ের একটি মাস্ক পরা ছিল এবং হাতে ঘড়ি ও মোবাইল দেখা যায়। সাড়ে ৫টার দিকে কক্ষটিতে প্রবেশ করলেও ৮টা ১০মিনিটের পর কক্ষটি থেকে বের হন সাদা পাঞ্জাবি পরা ওই যুবক। হোটেলটির ২য় তলা হেটে এসে সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে নামেন। এরপর হাত মুছতে মুখতে আবারো ২য় তলা এসে হেটে গিয়ে ২০৮ কক্ষটির আগে কক্ষে দরজায় ধাক্কা দেন এরপর ২০৮ নাম্বার কক্ষটিতে প্রবেশ করেন। কয়েক মিনিট পর ওই যুবক বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে হোটেলের সামনে থাকা মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে যান।
ওই যুবককে নয়ন বলে দাবি করছেন নিহতের পরিবার ও বন্ধুরা। রামু উপজেলার গর্জনিয়া এলাকার এই যুবক থাকেন কক্সবাজার শহরের কোবা টাওয়ার নামের ফ্ল্যাটটিতে। বিভিন্ন সময় নয়নকে নিহত সাইফুদ্দিনের সাথে দেখা গেছে বলে নিশ্চিত করেছে সাইফুদ্দিনের বন্ধু ইলিয়াছ মোহাম্মদ বৈরাম। তিনি জানান, সাইফুল এই যুবককে তার শ্যালক বলে পরিচয় দিতেন এবং ওই যুবকটি সাইফুদ্দিনকে দুলাভাই ডাকতেন। নিহতের ভাই মহিউদ্দিন বলেন, ‘রাতে বড় ভাই বাড়িতে যাননি। ফোনও বন্ধ ছিল। ভাবি (নিহতের বউ) ভাইয়ের বন্ধুদের ফোন করে খবর নিতে থাকে। ভাইয়ের বন্ধু ইলিয়াস ভাইয়ের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে খবর নিতে নিতে সানমুনে এসে কক্ষে মরদেহটি পান। মহিউদ্দিন বলেন, নয়ন নামের যে যুবককে সন্দেহ করা হচ্ছে সে কোনভাবে বড় ভাইয়ের শ্যালক নয়।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে হোটেলটি যায়। সিসিটিভির ফুটেজ তিনিও দেখেছেন। এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। সন্দেহজনক কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন।
এদিকে ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে সাইফুদ্দিনের রাজনৈতিক সহকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খুনিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের নামাজে জানাজা রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা।