ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাবনা চিনিকলে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে 

পাবনা চিনিকলে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে 

পাবনা চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) তৈরির কাজও বন্ধ রয়েছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে ইপিটির জন্য কেনা যন্ত্রপাতি। প্রতিবছর বাড়ছে চিনিকলের ঋণের সুদ। লোকসানের কারনে ২০২০ সালে পাবনা চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এদিকে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট না করে দেশের স্বার্থে দ্রুত চিনিকলটি চালুর দাবী করেছেন পাবনার আখচাষীরা।

সোমবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, আগাছা ও জঙ্গলে ঢেকে গেছে পুরো কারখানা এলাকা। আখ পরিবহনের লরিগুলো খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে। ক্ষয়ে গেছে কারখানার বেড়া। অযত্নে পড়ে আছে আখমাড়াইয়ের যন্ত্র। অথচ একসময় শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদচারণায় মুখর চিনিকলটি।

পাবনা চিনিকলের একটি সুত্র জানায়, সরকারি অর্থায়নে ২০১৮ সালে চিনিকলটিতে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন। এতে ব্যয় ধরা হয় আট কোটি টাকা। ২০২০ সালে চিনিকলটি বন্ধ হওয়ার তিন মাস আগে শুরু হয় ইটিপির নির্মাণকাজ। এ জন্য আনা হয় বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। ২০২০ সালে চিনিকল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে ইটিপির নির্মাণকাজও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ইটিপির জন্য আনা যন্ত্রপাতি গুদামেই নষ্ট হচ্ছে।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া এলাকায় ৬০ একর জমিতে পাবনা চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়। চিনিকলটি প্রতিষ্ঠার পর জেলার ৯ উপজেলায় ব্যাপকভাবে আখ চাষ শুরু হয়। কিন্তু উৎপাদন শুরুর পর থেকেই লোকসান গুনতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় চিনি আহরণের হার, আখের জমি, লোকসানের পরিমাণ এবং ব্যবস্থাপনার খরচ বিবেচনায় দেশের ছয়টি চিনিকলে আখমাড়াই না করার নির্দেশ দেয়। এর পর থেকে পাবনা চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ হয়ে যায়।

চিনিকল সূত্র জানায়, চিনিকলটিতে প্রতিদিন দুই হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা রয়েছে। ২০১৬ সালে চিনিকলটিতে ২ হাজার ১৪৬ মেট্রিক টন ও ২০১৭ সালে ২ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়। ২০১৮ থেকে উৎপাদন আরও বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে চিনিকলে ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়। তখন প্রায় ৮০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। এর মধ্যে ৫৮৯ জন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন। অন্যরা মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। চিনিকল বন্ধ হওয়ার পর অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। বর্তমানে ১০ জন কর্মকর্তা, ১৭ জন কর্মচারী ও ৩০ জন প্রহরী রয়েছেন। একসময়ে শ্রমিক-কর্মচারীতে মুখর চিনিকলটিতে এখন পুরোই নীরবতা নেমে এসেছে। এদিকে চিনিকলটির প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। প্রতিবছরই ঋণের সুদ বাড়ছে। বাংলাদেশ আখচাষি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আখচাষি সমিতির সভাপতি শাজাহান আলী বলেন, বন্ধ হওয়া ছয়টি চিনিকলের মধ্যে পাবনা চিনিকল সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। এখানে সব ধরনের সুবিধা আছে। দেশের চিনিশিল্পকে রক্ষা করতে হলে এবং চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে দ্রুতই সব কটি চিনিকল চালু করা জরুরি। এ ছাড়া চিনিকলের যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেলে সরকারের বড় ধরনের লোকসান হবে।

শাহজাহান আলী আরও বলেন, আধুনিকায়ন ও বহুমুখী উৎপাদনে গেলে প্রতিটি চিনিকলই লাভের মুখ দেখবে। কোটি কোটি টাকার এই সম্পদ নষ্ট না করে দেশের স্বার্থে সরকার দ্রæত চিনিকলগুলো চালুর ঘোষণা দেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণকাজ শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে। ইটিপির জন্য আনা যন্ত্রপাতি গুদামে পড়ে আছে। বিষয়টি আমাদের ঢাকা অফিস দেখে। তিনি আরো বলেন, মিল বন্ধ থাকলে যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা সব নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। একদিকে যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে ঋণের সুদ বাড়ছে।

পাবনা,চিনিকলে,নষ্ট
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত