সাভারে শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া হত্যার পর চিরকুট লিখে ফেলে রাখার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব। সেই সাথে মূল পরিকল্পনাকারী ইমনসহ জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং হত্যাকান্ডের পর লুট হওয়া পাঁচ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এবিষয়ে ব্র্রিফিং করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ইমন খান (২৩), মো. সাগর (২২) ও ছাদেক গাজী (২২)। র্যাব বলছে, তিনজনই ছিল নিহত কিবরিয়ার পরিচিত। যশোর, ঝিনাইদহ ও রংপুর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ইমনের পরিকল্পনায় হত্যাকান্ডটি ঘটে। ওই শিক্ষক মাঝেমধ্যে সাগরের আটোরিকশায় যাতায়াত করতেন। এই সুবাদে তাদের সুসম্পর্ক ছিল। ছয় মাস আগে সাগর তার বন্ধু ইমনকে শিক্ষকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর ইমন ও সাগর মাঝেমধ্যে ওই বাসায় যেতেন। শিক্ষক কিবরিয়া জমি কেনাবেচার টাকা বাসায় রাখতেন- বিষয়টি খেয়াল করে তাকে হত্যা করে টাকা লুটের পরিকল্পনা করে ইমন। ঘটনার ৭-৮ দিন আগে বন্ধু ছাদেককে এমন পরিকল্পনার কথা জানায় ইমন।
ছাদেক এই পরিকল্পনায় সম্মতি দিলে গত ১৯ আগস্ট ইমন শিক্ষককে ফোন করে তার সাথে দেখা করতে চায়। রাত পৌঁনে ১১টায় ইমন ও ছাদেক শিক্ষকের বাসায় উপস্থিত হয় এবং সাগর অটোরিকশা নিয়ে আশপাশে অবস্থান করে। সেই বাসায় নাস্তা শেষে আলাপচারিতার একপর্যায়ে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে ছাদেক ভিকটিমের গলা এবং ইমন মুখ চেপে ধরে। এসময় তারা ভিকটিমের লুঙ্গি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এরপর ইমন ভিকটিমের বিছানার নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪টি মোবাইল লুট করে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ছাদেক চিরকুট লিখে লাশের পাশে রেখে দেয়। চিরকুটে কিবরিয়াকে নৈতিক স্খলনের কারণে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এই হত্যার পেছনে জঙ্গিগোষ্ঠীর হাত রয়েছে এমন ধারণা দিতে চিরকুটের নিচে লেখা হয় ‘আমরা ইসলামের সৈনিক’। পরে সাগরের অটোরিকশায় উঠে তারা সাভার বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখানে সাগরকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৬ লাখের মধ্যে ৩ লাখ টাকা করে ভাগ করে নেয় ইমন ও ছাদেক। তারপর তিনজনই আত্মগোপনে চলে যায়।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট বিকেলে সাভারের ভাটপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে শিক্ষক গোলাম কিবরিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর ভাইদের সাথে এই বাড়িতেই থাকতেন তিনি। সেদিন দুপুরেও ঘুম থেকে না উঠায় তার ঘরের দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে পেছনের দরজা খোলা দেখে ভেতরে প্রবেশ করে খাটের উপর লুঙ্গী দিয়ে হাত-পা বাঁধা ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় তার লাশ দেখতে পায় প্রতিবেশীরা।
এক সময় সাভারের রেডিও কলোনি মডেল স্কুলে শিক্ষকতা করলেও বর্তমানে টিউশনি ও পাশাপাশি জমির ব্যবসা করতেন। পায়ে সমস্যা থাকায় বেশিক্ষণ হাটতে না পারায় নির্দিষ্ট রিকশায় বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন তিনি।