টাঙ্গাইলে ৯ নেতা দিয়ে চলছে আওয়ামীলীগের তিন সাংগঠনিক কমিটি
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৭:৪০ | অনলাইন সংস্করণ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলে আওয়ামীলীগের ধনবাড়ী উপজেলায় দুই ও কালিহাতী উপজেলায় তিন এবং টাঙ্গাইল শহর শাখায় চার নেতা দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটি আনুষ্ঠানিক ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের এক বছর অতিবাহিত হলেও নানা কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনীহা, পদ পেতে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা এবং ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদ-বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
জানাগেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপির নিজ এলাকা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন দীর্ঘ ১১ বছর পর গত বছরের ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। মধুপুর উপজেলা থেকে পৃথক হওয়ার পর নতুন এ উপজেলায় প্রথম সম্মেলন হয়েছিল ২০১১ সালের ২ নভেম্বর।
ধনবাড়ী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন, কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। প্রধান অতিথি ছিলেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কর্নেল(অব.) ফারুক খান। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মীর আহমাদ ফরিদকে সভাপতি এবং সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সেই থেকে অদ্যাবদি ৭১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই দুই নেতাকে দিয়েই চলছে ধনবাড়ীর সাংগঠনিক কার্যক্রম।
ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন জানান, নানা কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার খ্যাত কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন দীর্ঘ সাত বছর পর গত বছরের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয়। কালিহাতী আরএস পাইলট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রশাসক ফজলুর রহমান খান ফারুক।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নানা নাটকীয়তার পর কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা নতুন সভাপতি হিসেবে মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আনোয়ার হোসেন মোল্লা এবং ১ নম্বর সহ-সভাপতি পদে আবদুল মালেক ভূঁইয়াকে মনোনীত করেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম(ভিপি জোয়াহের) এমপি তাদের নাম ঘোষণা করেন। তারপর থেকে অদ্যাবদি ৭১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি এই তিন নেতা দিয়ে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।
কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার জানান, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন এবং রাজনৈতিক নানাবিধ জটিলতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। তারা খসড়া কমিটি গঠন করেছেন এবং দ্রæত তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন, আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি পদে পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এমএ রৌফকে পুনঃনির্বাচিত করা হয়। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে গোলাম কিবরিয়া এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে আহমেদ মজিদ সুমনের নাম ঘোষণা করা হয়। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ওইদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য জমা দিতে নির্দেশ দেন। তারপর থেকে ১১ মাস অতিবাহিত হলেও ৬৭ সদস্যের শহর আওয়ামীলীগের কমিটি চার নেতা দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রসঙ্গে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ রৌফ জানান, শহর আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষে কাজ করা হচ্ছে। আগামি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে।
ধনবাড়ী ও কালিহাতী উপজেলা এবং শহর আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, সম্মেলনের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় তারা কোন পদবী ব্যবহার করতে পারছেন না। সাবেক নেতা হিসেবে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হচ্ছে। এভাবে কাজ করে তারা আনন্দের পরিবর্তে হতাশ হয়ে পড়ছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় পদ পেতে অনেকে বিশেষ করে হাইব্রিড নেতারা মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়ে উপঢৌকন নিয়ে লবিং করছেন।
তারা জানান, যারা মাঠের নেতাকর্মী- তারা মন্ত্রী-এমপিদের পেছনে ঘুর ঘুর করেন না, সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে দিনরাত পরিশ্রম করেন। এ কারণে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদ বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভপতি আনিসুর রহমান জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সকল নেতাকর্মী তৎপর রয়েছে। জাতীয় ও দলীয় কর্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ততা ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে জেলার তিনটি সাংগঠনিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়নি। তবে কোন কোন এলাকায় খসড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।