পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে নির্মাণাধীন ১২ তলা ভবন থেকে পড়ে দুইজন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হল ভবনে এঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর মসুদেবপুর বাগানপাড়ার আনিসুর রহমানের ছেলে তুহিন রহমান ও রাজশাহীর গোদাগাড়ির ঘান্টি গেতাগাড়ী এলাকার মৃত মজিবুর আলীর ছেলে আসাদুল আলী।
এদিকে মর্মান্তিক এঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিকে দায়ী করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক বিষয়টি এড়িয়ে যান। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ প্রকল্প কাজ শুরুর পর থেকে ১৫জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বার বার শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় পাবনার সচেতন সমাজ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হলের ১২তলা ভবনে প্লাস্টারের কাজ করার সময় রশি ছিঁড়ে নিচে পড়ে তিনজন নির্মান শ্রমিক গুরুত্ব আহত হোন। আহতদের উদ্ধার করে পাবনার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাজশাহীতে নেওয়ার পথে একজনের মৃত্যু হয়। আহত অপরজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পন্ডিতপাড়ার মো. নয়ন আলীর ছেলে রবিউল আউয়াল।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা বারবার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি, কিন্তু ফল হয়নি। এগুলো প্রকল্প পরিচালকের দেখার কথা। তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। ঘটনাটি উপাচার্য মহোদয়কে অবহিত করেছি।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অব.) আজিজুর রহমান শ্রমিক মারা যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সকালে তিনজন শ্রমিক নয় তলা থেকে পড়ে গেছে শুনেছি। তাদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মারা গেছে এমন কোন তথ্য আমার কাছে নাই।
তবে দুইজন মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধা বালা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ১২ তলা ভবনে কাজ করার সময় রশি ছিঁড়ে ৩ জন শ্রমিক আহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে দুইজন মারা গেছেন। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত অপরজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এবিষয়ে অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে পাবনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব কমরেড জাকির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পে বার বার শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ পর্যন্ত ১৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হল। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। পাবনার নাগরিক সমাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনিয়মের তদন্ত দাবী করেছেন।
