নৌ-সীমানার রাজরাজেশ্বর, ইব্রাহিমপুর ও শহরের রঘুনাথপুর মারাত্বক ভাবে ভেঙে বিলীন হচ্ছে
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ২০:০২ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর নৌ-সীমানায় অবস্থিত এ এলাকায় এ বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন এলাকা চাঁদপুরের পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর রাজরাজেশ্বর, ইব্রাহিমপুর ও শহরের রঘুনাথপুর মারাত্বক ভাবে ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর শহররক্ষা বাঁধ রয়েছে ম্রাত্বক ঝুঁকির মধ্যে।
এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর জেলার চরছেনসাস এলাকায়ও ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে চলছে। এক দিকে নদীর ¯্রােতের তীব্রতা অন্যদিকে বৃষ্টিতে ভাঙন পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে বহু এলাকা ত্রি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন ভাংগন ঠেকাতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ীভাবে স্থানীয়রা নিজেদের বসতভিটা রক্ষা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্নভাবে সম্পত্তি রক্ষার চেষ্টা করছেন। সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চিরারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় টিনের অবকাঠামো সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড শহর রক্ষাবাঁধসহ চলতি বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে জরুরীভিত্তিতে ৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করেছেন মর্মে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জহিরুল ইসলাম জানান। তাছাড়া শহরের পুরান বাজার ও নতুন বাজার এলাকা ঝুঁকিমুক্ত করতে ৮২০ কোটি টাকার একটি স্থায়ী প্রকল্প নদী পরিসংখ্যান কমিশনে পাঠানো হয়েছে । এ প্রজেক্টটির সর্বমোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫০০ কোটি টাকা। যা’ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
চলতি বর্ষায় চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর এবং ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙনে দু’টি ইউনিয়নের ২ শতাধিক পরিবার বসতবাড়ী হারিয়ে ছিন্নমূল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে শহরের মাঝদিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীতীরবর্তী সদরের রঘুনাথপুর এলাকায়। ভাঙ্গন আতঙ্কে দিনপার করছে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা। এ এলাকায় ডাকাতিয়ার ভাঙনে ইতোমধ্যে প্রায় ৫শ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অপরদিকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁেধর পুরানবাজার হরিসভা মন্দির এলাকা। অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। চলতি বর্ষায় এ স্থানে বøক ঢেবে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। এ অঞ্চলবাসীও আতংকে রয়েছে। হরিসভা এলাকায় বর্ষার শুরুতে ৪টি পেকেজের মাধ্যমে ৬ হাজার বøক ফেলা হয়েছে। সবমিলিয়ে এ স্থানে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারমূলক কাজ হয়েছে। তারপরও এ স্থান ঝুঁকিপূণবস্থায় রয়েছে। শহরের বড় স্টেশন মোলহেডে পানির প্রবাহের বিপদসীমা ৪ মিটার। তবে এ স্থানে বিপদসীমার নীচ দিয়েই বর্তমানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পদ্মা-মেঘনা নদীর পশ্চিমে রয়েছে আলু বাজার ফেরিঘাট। এই স্থানটির প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘণবসতি। আলুর বাজার ও ঈশানবালায় ভাঙনের কারনে বহু জমি ইতিমধ্যে মেঘনার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অথচ বর্ষার আগে এ স্থানে অস্থায়ীভাবে জিও ট্যাক্সটাইল ব্যাগের মাধমে ৩টি পেকেজে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৭০ মিটার কাজ হয়।
জানা যায়, চাঁদপুর শহরের পশ্চিমে ৫০ কি:মি: পদ্মা-মেঘনা নদীর ভাঙন লেগেই আছে। ক্রমাগত ভাঙনের ফলে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন বিস্তৃর্ণ জনপদ ছোট হয়ে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন হারিয়ে যেতে পারে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে এ ইউনিয়নের চিরারচর গ্রাম বহু বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে গেছে। ৫ কিলোমিটারের চিরারচর এখন রয়েছে আধা কিলোমিটার। বাকীটুকু বিলীনের পথে। এতে আতঙ্কের মধ্যেই দিনরাত পার করছেন ভাঙন হুমকিতে থাকা লোকজন।
একপরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত কয়েকবছরে নদীভাঙনের শিকার ৮শ’ বসতবাড়ি নদীতে বিলীন ও অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে বসতবাড়ি যা আছে তা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। যে কোনো মুহুর্তে এ ইউনিয়নের চিরারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা ও গাজীবাড়ি জামে মসজিদটি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনের অবকাঠামো সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত চিরারচর এলাকাটি ছিল ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। চিরারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা ভাঙনের মুখে। বিদ্যালয়ের স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অংশটুকুও বিলীনের পথে।
এছাড়াও চাঁদপুর-শরীয়তপুর জেলা সীমান্তের মধ্যে অবস্থিত ইব্রাহীমপুর ও পাশ^বর্তী শরীয়তপুর জেলার চরছেনসাস এলাকায়ও ভাঙনে বহু পরিবার বসতভিটা হারিয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে।
সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুরের বাসিন্দা বশির আহমেদ জানান, ভাঙনে চলতি বর্ষায় বহু ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে নদীর সামনে থাকা জনপথ ,বসতভিটা রক্ষার জন্য দাবী জানান।
ভাঙন কবলিত ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাশেম খান জানান, ভাঙন এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসেছেন এবং বালু ভর্তি অস্থায়ীভাবে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ দিয়ে ভাঙন এলাকায় প্রতিরোধের চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে ভাঙন ঠেকানো জরুরী। তাই দ্রæত ব্যবস্থা নিতে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহুরুল ইসলাম এ ড্রতিনিধিকে জানান, সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর এলাকার ১ কিলোমিটার প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা হয়েছে। আমরা জিও ব্যাগ দ্বারা এ সব এলাকায় কাজ করেছি। বর্তমানে যে সব জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে সব স্থানে মেরামত কাজ করা হবে। খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আপাততঃ সেখানে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ও বøক ফেলে এলাকায় ভাঙ্গন রক্ষার চেষ্টা করছি।
তিনি আরো জানান, সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এটির ডিজাইন ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। ডাকাতিয়া নদী ভাঙনের ব্যাপারে প্রকৌশলী আরো বলেন, আমরা ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছি। নদীর তীরে ভাঙ্গন এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বরাদ্দ পেলে জরুরী ভাবে কাজ করা হবে।