রংপুর নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১৯:২৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর

অবিরাম বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪ গেট খুলে দেয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৩টায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১২ ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিন্টমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমা হচ্ছে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। সেখানে ৫২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২৯ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার।

রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বেড়ে যায়। পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সঙ্গে কিছু কিছু প্লাবিত নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ । বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বেড়েছে পানি।

রংপুর অঞ্চলের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এর ফলে চরাঞ্চলে চাষ করা বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। পানিতে তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। কোথাও কোথাও হাঁটু পানিতে ডুবে আছে ঘর-বাড়িসহ উঠতি ফসল। সময়ে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে ওঠানামা করছে।

এদিকে, রংপুরের কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া ও পীরগাছা উপজেলার  ৭০টি চরাঞ্চলের গ্রামে পানি প্রবেশ করায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘর ৩ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ধানসহ শষ্য ক্ষেতগুলো তলিয়ে আছে পানিতে। পানিবন্দি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে ও পাউবো বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

এলাকাগুলো হচ্ছে- গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, নোহালী ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম। কাউনিয়া উপজেলার ধুসমারার চর, আজম খাঁ চর, হাইবত খাঁ গোনাই, পল্লীমারী, চর একতা, চর মিলনবাজার, গোপীকাল্লা, ডালার চর ও চর গোদাই।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর জেলায় ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ মাসে আরও দু-একদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সে কারণে দুর্গম চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। অবিরাম বর্ষণ আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি মারাত্মক বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি জানান, ভারতের উজানে পানি বৃদ্ধির কারণে গজলডোবা ব্যারাজের সবগুলো গেট পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই খুলে দেওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর পানি মারাত্মক বেড়েছে। আজ তিস্তাা ব্যারাজের ৪৪টি গেটের সবগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রবল স্রোতের কারণে নদী তীরবর্তী আশে পাশের গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। নতুন নতুন গ্রামে প্লাবন হওয়ায় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।