দশ মাস বয়সী শিশু হত্যার দায় স্বীকার মায়ের

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১৯:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

  ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

দশ মাস বয়সী ফুটফুটে সুন্দর শিশু লাইসা আক্তার ছোঁয়া। সপ্তাখানেক আগে কাঁচামাটিয়া নদী থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। সেদিন পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছিল। এ ঘটনার সপ্তাহ না পেরোতেই ছোঁয়ার মা পপি আক্তার নিজেই মেয়েকে হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তার স্বামী ,শাশুড়ী ও বাড়ির লোকজনের কাছে। 

এবিষয়টি নিহত ছোঁয়ার বাবা থানায় অবগত করলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। পরে স্বামীর একটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল (২৭ আগস্ট) রবিবার লাইসা আক্তার ছোঁয়ার মা পপি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ ২৮ আগস্ট সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ। 

এর আগে গত (২২ আগস্ট) মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের হীরাধর এলাকার কাঁচামাটিয়া নদী থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। নিহত শিশু ছোঁয়া ওই এলাকার জিয়াউল হক ওরফে জিলুর মেয়ে। 

জানা গেছে, সাত বছর পূর্বে পপি আক্তার ও জিয়াউল হক ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় ছোঁয়া। পারিবারিক নানা কারণে স্বামী- স্ত্রীর মাঝে কলহ চলে আসছিল। 

পরিবার ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ঘটনারদিন দশমাস বয়সী শিশু কন্যা লাইসা আক্তার ছোঁয়াকে ঘুম পাড়িয়ে মা পপি আক্তার উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। একটু পর বাবা জিয়াউল হক এসে মেয়েকে খাঁটের উপর না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ঘরের পেছনে ২৫-৩০ ফুট দূরে কাঁচামাটিয়া নদীতে ভাসমান অবস্থায় মিলে শিশুটির মরদেহ। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।

ঘটনার দিনেই নিহত শিশুর দাদা আবু সিদ্দিক জানিয়েছিলেন, 'আমার নাতনী বসতে শুরু করেছে। ঠিকমতো হামাগুড়িও দিতে পারে না। এ অবস্থায় নদীতে পড়ে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। একই দাবি জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। 

এ প্রসঙ্গে নিহত ছোঁয়ার বাবা ও পপির স্বামী মো. জিয়াউল হক ওরফে জিলু বলেন, পারিবারিক নানা কারণে আমাদের মাঝে ঝগড়া চলতো। সে আমাদের বাড়িতে থাকতে চাইত না। বিভিন্ন অজুহাতে বাপের বাড়ি চলে যেতো। লাইসার লাশ পাওয়ার পর আমার স্ত্রীর অস্বাভাবিক আচরণে আমাদের সন্দেহ হয়। ছোঁয়াকে আমার স্ত্রী পপি আক্তার নিজেই হত্যা করে নদীতে ফেলে রেখেছিল। সে নিজে আমার কাছে ও আমার পরিবারের লোকজনের কাছে স্বীকার করেছে। কীভাবে হত্যা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন মানসিকভাবে খুব বিধ্বস্ত আছি। আর কথা বলতে চাই না। 

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা সংশ্লিষ্ট তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।