চাঁদপুরে ভাড়া বৃদ্ধিতে নৌপথে যাত্রী কমছে, বাড়ছে সড়কপথে
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ২০:০৩ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরে একশ’কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক নৌ-টার্মিনাল ভবন নির্মাণ হচ্ছে, তার পরও প্রতিদিন এ পথে যাত্রী চলাচল কমছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়াতে লঞ্চগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধিতে নৌপথে যাত্রী বিগত দিনের চাইতে অনেক গুণ কমেছে। সড়কপথে যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধি, আরামদায়ক হওয়াতে ও ভাড়া তেমন না’বাড়াতে যাত্রী বিগত দিনের চাইতে অনেক গুণ বেড়েই চলছে।
এ রুটে রাস্তার উন্নয়ন, বিভিন্ন পরিবহণে আরামদায়ক যাতায়াত, সময় স্বল্পতা, খরচ কমসহ নানা সুবিধায় সড়ক পথ ব্যবহার করতে পছন্দ করছে অধিকাংশ যাত্রীরা। অপরদিকে অত্যাধুনিক লঞ্চ সার্ভিস চালুর পরও যাত্রী ধরে রাখতে পারছে না লঞ্চ মালিকরা। নানা সংকটের কারনে কমছে চাঁদপুর-ঢাকা নৌপথের যাত্রী চলাচল ও মালামাল পরিবহন।
বর্তমানে বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই-গৌরীপুর সড়ক, বাবুরহাট-মতলব চিড়ারচর হয়ে দাউদকান্দি মেঘনা ব্রিজ, হাজীগঞ্জ-কচুয়া বিশ্বরোড হয়ে সাচার-গৌরীপুর সড়ক ও শাহরাস্তির কালিয়াপাড়া-কচুয়া-সাচার-গৌরীপুর হয়ে রাজধানীতে যাতায়াত সহজ হয়েছে। এ কারণে এসব রুটে যান চলাচল কয়েকগুণ বেড়েছে। শুধু চাঁদপুর নয়, পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী ও ল²ীপুর জেলার যাত্রীদের একটি বিরাট অংশও এসব সড়ক দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছেন। যে কারণে এসব সড়কে সময়ের সুবিধার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাইভেট কারে যাত্রী পরিবহণ যেমন বেড়েছে তেমনি সহজতর হয়ে ওঠেছে যাতায়াত সুবিধা। বাসের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। বর্তমানে এ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়ায়চালিত প্রায় সহস্রাধিক গাড়ি ঢাকায় যাত্রী পরিবহণ করছে বলে জানান চাঁদপুরের রেন্ট এ কারের চালক ও মালিকরা।
বাবুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী ও এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী মোবারক গাজী বলেন, বর্তমানে ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুরের ওয়্যারলেস মোড় ও বাবুরহাট বাজারের মতলব রোড থেকে প্রতিদিন শতাধিক ছোট-বড় এসি/নন-এসি গাড়ি চলাচল করছে। এসব গাড়িতে ৩/৪ টাকায় ঢাকা যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়। পাশাপাশি বর্তমানে এসব সড়কে যাত্রীবাহী বাসও চলাচল করছে। কম খরচে এসব বাসে সায়েদাবাদ যাওয়া সুবিধা হচ্ছে বলে জানান বাস যাত্রী শাহাতলীর শফিক কারী।
নৌপথে ঢাকা-চাঁদপুর রুটে বেশ কয়টি বিলাসবহুল লঞ্চ চালুর সঙ্গে সঙ্গে ভাড়াও বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু সেই তুলনায় এই রুটে যাত্রী সেবার মান বাড়েনি। হঠাৎ-হঠাৎ বিভিন্ন লঞ্চের যাত্রা বাতিল, অনেক লঞ্চেরই কেবিনে একই বেডশিট না ধুয়ে কিংবা পরিবর্তন না করে বারবার ব্যবহার, দুর্গন্ধ, কেন্টিনে খাবারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগানো, যাত্রী সেবার মান নাজুক ,যাত্রীর ব্যক্তিগত বা পারিবারিক মালামাল বহনের জন্য লঞ্চ স্টাফদের চাঁদাবাজি, কুলিদের দৌরাত্ম্য, রাতে চলাচলকারী লঞ্চে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা না থাকা, আনসারদের সমন্বয়ে লঞ্চে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, চাঁদপুর টার্মিনাল ও ঢাকা টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন পরিবহণে ভাড়া বেশি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাসহ নানা ঝামেলায় যাত্রীরা এখন হতাশ হয়ে পড়েছে। তাই লঞ্চে যাত্রী চলাচল ক্রমশ কমে যাচ্ছে যাত্রী ।
চাঁদপুর-ঢাকা নৌরুটের এমভি প্রিন্স অব রাসেলের চাঁদপুর ঘাট সুপারভাইজার রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ঘোষেরহাট, পয়সারহাট, রাঙ্গাবালী, তুষখালী, হুলারহাটে তার ৫টি লঞ্চ দায়িত্ব ছিল। এগুলো চাঁদপুর ঘাট ধরত। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এসব রুটের লঞ্চ আসা বন্ধ হয়ে গেছে। চাঁদপুর-ঢাকা রুটে তার যে রাসেল লঞ্চটি রয়েছে, যাত্রী সংকটে সেটিও এখন সপ্তাহে ১ দিন চলছে। একবার চলাচল করলে ৮০ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এডভেঞ্চার লঞ্চটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছিল, সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।
এমভি আবে জমজম লঞ্চের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার বলেন, চাঁদপুর-ঢাকা পথে যাত্রী ভাড়া কমানোর পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বাড়াতে হবে। পাশাপাশি লঞ্চের যাতায়াত সময় কমিয়ে আনতে পারলে অবশ্যই এই রুটে যাত্রী বাড়বে অনেক গন।
বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর লঞ্চঘাটের টিআই শাহআলম বলেন, স্বাভাবিকভাবেই সড়কপথের ‘উন্নয়নের আঘাত’ লেগেছে নৌপথে। তাই লঞ্চে যাত্রী কম হচ্ছে। সিডিউল অনুযায়ী চাঁদপুর-ঢাকা রুটে ২৭টি, চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৪টি ও দক্ষিণাঞ্চল রুটে ৯টি লঞ্চ চলাচল করার কথা ছিল। তার স্থলে চাঁদপুর-ঢাকা রুটে ২০-২২টি, নারায়ণগঞ্জ রুটে ১০-১১টি ও দক্ষিণাঞ্চল রুটে ৫টি লঞ্চ চলছে। এছাড়া এমভি আবে-জমজম ও ময়ূর-১০ নামের এ দুটি চারতলা লঞ্চ বর্তমানে চলাচল করছে।
চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ এর সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন জানান, বিদেশি অর্থায়নে চাঁদপুরে আধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে। বর্তমান চাঁদপুর লঞ্চঘাটের স্থানেই হবে নতুন লঞ্চঘাট ও আধুনিক নৌ-টার্মিনাল ভবন নির্মাণ। তখন যাত্রীরা নৌপথে যাতায়াত করতে আগ্রহ বেড়ে যাবে।