দীর্ঘ ছয় বছর ধরে প্রেম, পরে ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক। এক পর্যায়ে আরেক তরুণীর সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা চলাকালে প্রেমিকের বাড়ীতে প্রেমিকার অনশন। এরপর প্রেমিকের পরিবার জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে দুই লাখ টাকায় ঘটনার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। পরবর্তীতে বাসা তালাবদ্ধ রেখে প্রেমিকসহ পরিবারের সদস্যদের আত্মগোপনের এমন ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের টেকনাফে।
এ ঘটনায় ভূক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ এখনো আমলে নেয়নি।
ঘটনায় অভিযুক্ত তরুণ আনসার উল্লাহ (২৮) টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের নতুন পল্লান পাড়ার আব্দু সালামের ছেলে।
আর ভূক্তভোগী তরুণী পার্শ্ববর্তী টেকনাফ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরান পল্লান পাড়ার বাসিন্দা।
ভূক্তভোগী তরুণী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে আনসার উল্লাহ এর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক। প্রেম শুরুর কিছুদিন যাওয়ার পর থেকে তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয় আনসার। এতে তাদের দুইজনের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্টতায় রূপ নেয় এবং গোপনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করতে যান। এরই সূত্র ধরে আনসার উল্লাহ একাধিকবার আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এক পর্যায়ে আমাকে নিয়ে সেলবিভিন্ন হোটেলে বেড়াতে গিয়ে একাধিকবার অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
ওই তরুণী বলেন, “ গত বছর দেড়েক আগে আনসার উল্লাহকে বিয়ের জন্য আমি চাপ দিই। কিন্তু সে কোনভাবেই রাজী হয়নি। পরে বিষয়টি আমার পরিবারকে অবহিত করি। আমার পরিবারের লোকজন এ নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরও বিয়ে করতে রাজী হয়নি।
এরপরও আনসার উল্লাহর সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ প্রেমের সম্পর্ক অব্যাহত ছিল জানিয়ে ভূক্তভোগী তরুণী বলেন, সম্প্রতি আনসার উল্লাহর সঙ্গে আরেক তরুণীর বিয়ের জন্য পারিবারিকভাবে কথাবার্তা চলছিল। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর তার (আনসার) পরিবারের সাথে আমি যোগাযোগ করি। কিন্তু তার পরিবার আমার সঙ্গে বিয়েতে রাজী হয়নি। এখন আনসার উল্লাহ দীর্ঘ ৬ বছরের প্রেমের সম্পর্কটাই অস্বীকার করছে।
এ নিয়ে গত ১৬ আগস্ট কোন উপায় না দেখে ভূক্তভোগী তরুণী প্রেমিক আনসার উল্লাহর বাড়ীতে গিয়ে অনশন শুরু করেন। পরে খবর পেয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর সংরক্ষিত ও
ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য লায়লা বেগম এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে উভয় পরিবারের লোকজনের মধ্যে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ছেলের (প্রেমিক) পরিবার রাজী হননি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য লায়লা বেগম বলেন, গত ১৬ আগস্ট তার এলাকায় দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের জেরে বিয়ের দাবিতে এত তরুণী আনসার উল্লাহর বাড়ীতে অনশন করছে বলে খবর পান। পরে উভয় পরিবারের লোকজন নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বসে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রেমিক আনসার উল্লাহ ও তার পরিবার সবধরণের সম্পর্ক অস্বীকার করে ২ লাখ টাকায় সমঝোতার চেষ্টা করেন। এতে প্রেমিকার পরিবার রাজী না হওয়ায় তা ভেস্তে যায়।
এ নিয়ে ভূক্তভোগী তরুণী অভিযোগ করে বলেন, প্রেমিক আনসার উল্লাহ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন হোটেলে বেড়াতে নিয়ে একাধিবার আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এখন সবধরণের সম্পর্ক অস্বীকার করার পাশাপাশি উল্টো নষ্টা মেয়ে বলে দুর্নাম রটাচ্ছে। সে তার বন্ধু-বান্ধবসহ ঘনিষ্টজনদের ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লেকমেইলিং করে বড় অংকের টাকা আদায় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছি বলে রটিয়ে বেড়াচ্ছে।
বিয়ের দাবিতে আনসার উল্লাহর বাড়ীতে অনশন করলে তার বাবাসহ পরিবারের লোকজন শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছে। পরে নষ্টা মেয়ে আখ্যায় দিয়ে টেনে-হেঁচড়ে বের করে দিয়েছে “ বলে দাবি করেন ওই তরুণী।
তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে বসত ঘরে তালা লাগিয়ে আনসার উল্লাহসহ পরিবারের লোকজন আত্মগোপন করেছেন। সোমবার পর্যন্ত খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন আনসার উল্লাহদের বসত বাড়ী এখনো তালাবদ্ধ রয়েছে।
ঘটনার ব্যাপারে কথা বলতে প্রেমিক আনসার উল্লাহ ও তার বাবা আব্দু সালামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়ায় কোন ধরণের আলাপ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ঘটনায় ভূক্তভোগী তরুণীর বাবা কোন ধরণের উপায় না পেয়ে গত ১৭ আগস্ট টেকনাফ থানায় প্রেমিক আনসার উল্লাহকে বিবাদী একটি অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান ভূক্তভোগী তরুণী।
ওই তরুণী জানান, ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে আনসার উল্লাহকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনো অভিযোগটি আমলে নেয়নি। বর্তমানে তার এক ভগ্নিপতির বাড়িতে অবস্থান করছেন। ঘটনার ব্যাপারে জানতে টেকনাফ থানার ওসি মো. জোবাইর সৈয়দের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কোন ধরণের সাড়া না পাওয়া কথা বলা সম্ভব হয়নি।