চৌদ্দগ্রামে দলিল লেখক সমিতি ও নকলনবিশগণের দ্বন্দ্বে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম ব্যাহত
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নকলের ফিস নির্ধারণকে কেন্দ্র করে দলিল লেখক সমিতি ও নকল নবিশগণের দ্বন্ধে অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে দলিলের নকল হস্তান্তর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে করে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রেজিস্ট্রি দলিলের নকল গ্রহণের সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহীতারা। নকলের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রেজিস্ট্রি অফিসের কোন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান না হয়েও নকলের ফি নির্ধারণে ভূমিকা রাখা এবং নকল নবিশগণের থেকে দলিল হারে ১০০ টাকা করে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সদর দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে। নকল নবিশগণ প্রতি নকলে ১০০ টাকা হারে সমিতিতে প্রদানে রাজি না হওয়ায় এই অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এ দ্বন্ধে মাত্র ৩-৪ মাস আগেও এক হাজার টাকার নকল এখন ১৭’শ থেকে ২’হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে সেবা গ্রহীতাগণ থেকে। রেজিস্ট্রি এবং দলিলের নকলের জন্য জরুরী প্রয়োজনেই মানুষ দলিল লেখক এবং অফিসের স্বরণাপন্ন হয়। কিন্তু চলতি সময়ে নকল না পাওয়ায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এছাড়াও দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রামে রেজিস্ট্রি হওয়া দলিল প্রতি ১০০ টাকা চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। রেজিস্ট্রি অফিসের কেরানী ফরিদা আক্তার অফিসের সেরেস্তার বিলের সাথে সমিতির চাঁদার টাকাও একসাথে আদায় করায় সমিতিকে রেজিস্ট্রি অফিসের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গণ্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক দলিল লেখক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক জানান, চৌদ্দগ্রাম সদর রেজিস্টি অফিসে প্রতি বছর অন্তত ১২-১৩ হাজার দলিল রেজিস্ট্রি হয়। দলিল প্রতি ১০০ হারে সমিতি শুধুমাত্র রেজিস্ট্রি দলিল বাবদ ১২-১৩ লক্ষাধিক টাকা বছরে আদায় করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেদকের সাথে কথা বলা একাধিক দলিল লেখক এবং নকল নবিশ বলেন, এর আগের কোন কমিটি এতটা নিচে নামে নাই। বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ টাকার জন্য নকল নবিশগণের সাধারন আয়ের উপরও চোখ পড়েছে। প্রতি বছরে সমিতির ১৫-২০ লক্ষ টাকার মতো আয় হলেও প্রতি বছরে ১টি আনন্দ ভ্রমণে ব্যয়, মাঝেমধ্যে মিটিংয়ে সামান্য ব্যয় করাতেই দায়িত্ব শেষ করে।
২৯ আগষ্ট মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানাধীন কাঠগড় এলাকা থেকে দলিলের নকলের জন্য আসেন হুমায়ুন কবির নামের জনৈক ব্যাক্তি। তিনি তাঁর নিজ নামীয় চিওড়া ইউনিয়নের হস্তিমৃতা মৌজার রেজিস্ট্রি দলিলের নকল জমাদানের জন্য যান। কিন্তু নকল নবীশগণ জানান, সাধারনভাবে ১ সপ্তাহ সময় লাগলেও এখন অন্তত ১২দিন সময় দিতে হবে। একইদিন আবু বকর নামের আরেক সেবাগ্রহীতাকেও ১২-১৪ দিনের কথা বলা হয়। তবে অচলাবস্থা কেটে গেলে আগের নিয়মে ১ সপ্তাহ পর নকল পাওয়া যাবে বলেও জানান এক নকল নবিশ।
চৌদ্দগ্রাম দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সমিতির নামে ১০০ টাকা করে গ্রহণ করি না। নকল নবিশদের বাড়তি টাকা দাবির কারণে গত কয়েকদিন বন্ধ ছিল। বর্তমানে নকল লেখা চালু রয়েছে’।
চৌদ্দগ্রাম দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. শাহীন মিয়া বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশের সব রেজিষ্ট্রি অফিসে নকল নেয়ার সময় দলিল লেখক সমিতির চাঁদা ১০০-১৫০ টাকা আদায় করে। একই টাকা সাব রেজিষ্টারের বাৎসরিক অডিটের সময় আমরা খরচ করি’।
বুধবার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিষ্টার ওমর ফারুক বলেন, চৌদ্দগ্রাম দলিল লেখক সমিতির কোন নিয়ন্ত্রণ আমাদের অফিসের নেই। দলিলের নকল লেখা সাময়িক বন্ধ ছিল, এখন চালু রয়েছে। সমিতিকে ১০০ টাকা দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। অফিসের পক্ষ থেকে অডিটের সময় দলিল লেখক সমিতি থেকে কোন খরচ নেয়া হয় না’।