চাঁদপুরের হাইমচরে পরকীয়ার জেরে নিজ ছেলেকে হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত ২ জন আসামীকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর ও মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে নারায়ণগঞ্জস্থ র্যাব-১১ এর একটি টিম। ৩১ আগষ্ট মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এলাকা থেকে মো. ইউসুফ মোল্লা ও ১ সেপ্টেম্বর কাঁচপুর এলাকা হতে মো. মাহবুব মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত মো. ইউসুফ মোল্লা (৩৬) চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানাধীন রামপুর বাজার ২ নং ওয়ার্ড উত্তর বিষকাটালি এলাকার হোসেন মোল্লার পুত্র ও মো. মাহবুব মোল্লা (৩৮) একই এলাকার মোল্লা বাড়ির বিল্লাল মোল্লার পুত্র।
২ সেপ্টেম্বর বিকেলে র্যাব-১১ এর সিনিয়র এএসপি ও মিডিয়া অফিসার মো. রিজওয়ান সাঈদ জিকু এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সঙ্গে আসামি জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এ বিষয়ে মা ও ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজিবাড়ির আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন। এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়াবিবাদ হতো। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারই আলোকে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমা বেগমকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম নিজ গৃহে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগীদের দিয়ে ছেলে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে কেটে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়।
পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান, ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গেছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পার হওয়ার সময় আরিফের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা (নং ৫) দায়ের করেন। ওই মামলায় ২০২৩ সালের ২৩ আগষ্ট আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। ভাড়াটিয়া খুনির মাধ্যমে আপন ছেলে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মা খুকি বেগম (৫০) ও জয়নাল গাজীকে (৩৫) মৃত্যুদন্ড এবং সহযোগী দুই আসামি ইউছুফ মোল্লা (৩৬) ও মাহবুব মোল্লাকে (৩৮) যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়।
গ্রেফতারকৃত ইউসুফ মোল্লা জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতে গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর পরই ইউসুফ মোল্লা চাঁদপুর থেকে পালিয়ে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এ নতুন ঠিকানায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকে এবং ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি সে পলাতক ছিলেন। গ্রেফতারকৃত অন্য আসামী মাহবুব মোল্লা জানায় যে, ঘটনার পর গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৩ বছর জেলে ছিলেন। পরবর্তীতে জামিনে বের হয়ে চাঁদপুর থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
র্যাব জানায়, আদালত কর্তৃক রায় ঘোষণার পরে র্যাব ছায়া তদন্ড শুরু করে। এক পর্যায়ে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল গোপন তথ্যের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীর অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ওই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী পরকীয়া প্রেমিক প্রেমিকা এখনো পলাতক আছেন। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব-১১ এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।