মহেশখালীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর-হুমকি, যুবক গুলিবিদ্ধ
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৫২ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার পাঁয়তারায় নেমেছে একটি গ্রুপ। দুয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এতে ইন্ধন দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ওবায়দুল হক (২৭) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি ফকিরজুম পাড়ার ছবিউর রহমানের পুত্র। এর আগে মারধরের শিকার হয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আরিফ মোহাম্মদ ইফতেখার রশিদ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাতে ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ফকিরজুম পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়িদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।পুলিশ বলছে, সেখানে নজরদারি বাড়িয়েছে তারা।
হামলার শিকার আরিফ মোহাম্মদ ইফতেখার রশিদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ফকিরজুম পাড়া রাস্তার মাথায় একটি দোকানে অন্যান্যদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনি। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও একটি মোটর সাইকেলযোগে দোয়েল ও কামালের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী উপস্থিত হন। তারা কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করেন এবং হুমকি দিয়ে চলে যায়।
আরিফ জানিয়েছেন, আত্মস্বীকৃত সন্ত্রাসী দোয়েল, কামালসহ ১০/১২ জনের সন্ত্রাসী গ্রুপটি তার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। হামলার শিকারের বিষয়টি সংসদ সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন বলে তিনি জানান।
এর আগে রাত ১১টার দিকে সন্ত্রাসী গ্রুপটি ফকিরজুম পাড়া কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় ওবায়দুল হককে গুলিবিদ্ধ করে ফেলে চলে যায়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।
আহতের স্ত্রী জানিয়েছে, কামাল হোসেন, দোয়েল, হাবিব, মানিকসহ ১০/১২ জনের সন্ত্রাসী গ্রুপটি তার স্বামীর ওপর হামলা চালিয়েছে।
জানতে চাইলে কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ বলেন, ২০১৮-১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সেসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে কয়েক দফায় ১৪৯ জন আত্মীকৃত দস্যু আত্মসমর্পণ করেছিল। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইবো ঘোষণার পর থেকে কালারমারড়ায় পুরোনো দৃশ্য ফিরিয়ে আনতে মরিয়া একটি প্রভাবশালী মহল। এতে দু'একজন প্রভাবশালী নেতা ইন্ধন দিচ্ছেন।
তারেক শরীফ বলেন, একাধিক হত্যা মামলার আসামি ও আত্মস্বীকৃত দস্যুদের নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে প্রভাবশালী মহলটি। তারা যেকোনো মুহুর্তে হত্যাকান্ড সংঘটিত করতে পারে। আমি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, র্যাবের চিরুনী অভিযান পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।'
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি না বাড়ালে যেকোন মুহূর্তে হত্যাকান্ডসহ বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে দেড়যুগে অন্তত ২০ জন খুন হয়েছেন। এ তালিকায় সাবেক চেয়ারম্যান ওসমান গণি, গফুর, আলাউদ্দিন, মোজাম্মেল, রহিমা, বেলাল হত্যাকান্ড অন্যতম। এসব ঘটনায় আহত হয়ে অনেকে পঙ্গুত্ব জীবন পার করছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কালারমারছড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এখন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। এ এলাকার ফকিরজুম পাড়া, মোহাম্মদ শাহ ঘোনা, অফিস পাড়ার পাহাড়ি এলাকায় তাদের বিচরণ বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সন্ত্রাসীদের মূল টার্গেট কালারমারছড়ায় হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা সংঘটিত করা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক এক ইউপি সদস্য বলেন, 'মানুষ এখন রাত ৮টা বাজলেই বাড়ি চলে যায়। আগের মতো ব্যবসায়িরা নিরাপদ মনে করছে না। প্রতিনিয়ত আতংক নিয়েই দিন পারছেন। বিশেষ করে; পুলিশ ফাঁড়ি সরিয়ে নেয়ায় এ উদ্ভট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।'
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, 'সন্ত্রাসীদের হামলায় এক যুবক গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জানার পর সারারাত আমরা ঘটনাস্থলে ছিলাম। পাশাপাশি পুলিশ অভিযানও পরিচালনা করে। তবে হামলাকারীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়ে।'
ওসি বলেন, 'ঘটনাটি কারা ঘটিয়েছে সেটি উদঘাটনের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ ফেলে ব্যবস্থা নেব।'
জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, 'মহেশখালী এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সজাগ আছি। এরপরও যদি কেউ অপরাধ সংঘটিত করার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।'