সাতক্ষীরার শ্যামনগরে চুনা খালের সেতুটি দুই গ্রামের মানুষের নাড়ির বন্ধন
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৫৪ | অনলাইন সংস্করণ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চুনা খালের উপরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের যুবদের উদ্যোগ নির্মিত ১৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সেতু। আর এ সেতু মজবুত করেছে দুই গ্রামের মানুষের নাড়ির সম্পর্ককে। কষ্ট লাঘব হয়েছে প্রতিদিন এপথ দিয়ে যাতায়াতকারী কয়েক হাজার ভিন্ন ভিন্ন পেশার মানুষের। সেতুর কারণে যাতায়াত বন্ধ হওয়া শিক্ষার্থীরা এখন নির্বিঘ্নে যেতে পারছে বিদ্যালয়ে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যরা জানান, সেতুটি তৈরির পূর্বে পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রবীণ-প্রতিবন্ধী এ পারের মানুষ ওপারে যেতে পারতো না। মসজিদ মন্দিরে যেতে না পারায় ব্যহত হতো প্রার্থনা। দু পারের মানুষের মধ্যে সামাজিকতা কমে গিয়েছিল দেখা সাক্ষাৎ না থাকায়। অসুস্থ্য মানুষকে হাসপাতালে নিতে ঘুরে আসতে হতো ৭/৮ কিলোমিটার রাস্তা। সেই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যবৃন্দ। নিজেদের শ্রম বৃথা যেতে না দিয়ে দৃশ্যমান করে তুলেছে কাঠের সেতুটি।
১৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৫ ফুট প্রস্থের সেতুটি দু’পাশে দেয়া হয়েছে রেলিং। এর ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, প্রবীণ, প্রতিবন্ধীরা নিরাপদে স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারছে।
এছাড়া এ সেতু পাল্টে দিয়েছে গ্রামীণ জনপদের চিত্র। বিশেষ করে কৃষক তার উৎপাদিত কৃষি পন্য ও মাছ এ সেতুটি পার হয়ে বাজারজাত করতে পারছেন। সেতুটি ঘিরে উৎসবের আনন্দ বইছে এলাকাবাসীর মধ্যে।প্রতিদিন বিকালে গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে সেতুটি দেখতে আসছে শত শত মানুষ। সেতুটিতে উঠে ছবি তুলে পোস্ট দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।অনেকের কাছে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে সেতুটি তৈরি হওয়ার মাধ্যমে।
সেতুটির অদূরে ১৮৮ নং পানখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুলের অন্তত ৭০ ভাগ শিশু খালের ওপারের গ্রাম থেকে আসতো। ফলে স্কুলটিতে উপস্থিতির হার আশংকাজনক ভাবে কমে যায়। সেতুটি হওয়ার পরে ভোগান্তি কমেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, বেড়েছে উপস্থিতির সংখ্যাও।
পানখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মালবিকা মহালদার ও গৌতম মণ্ডল জানান, করোনার আক্রমনের কারণে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এরপরও মড়ার উপর খাড়া হয়ে দাঁড়ায় চুনা খালের উপর দুটি বাঁশের স্যাঁকো। দুটি বাঁশের উপর দিয়ে পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো। এ সময় অনেক ঝুঁকি থাকায় স্কুলে যেতাম না। এমনকি আমাদের বই-খাতা খালের জলে ভিজে যেতো। এখন আমরা এই সেতুর উপর দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি।
স্থানীয় বসিন্দা আব্দুস সাত্তার তরফদার বলেন, এটি নির্মাণের ফলে সুবিধা হয়েছে শিক্ষার্থী, কৃষক সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের। এখন উপজেলা শহরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।
১৮৮ নং পানখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন বলেন, চুনা খাল পার হওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্কুলে উপস্থিতির হার অর্ধেকেরও কম হয়েছিল। যা নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা খুব কষ্ট সাধ্য হয়ে পরে। বর্তমানে সেতুটি নির্মাণ হওয়ার ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বেড়ে গেছে। বাচ্চারা আনন্দের সাথে বিদ্যালয়ে আসছে।
চুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন ও গুচ্ছগ্রাম কেদার বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সেতুটি নির্মান হওয়ার আগে এক পার থেকে অন্য পারে সাইকেল, ভ্যান মটর সাইকেল পারাপার না করতে পারায় কোন মানুষ অসুস্থ্য হলে সাত থেকে আট কিলোমিটার ঘুরে আসতে হতো। এখন আর সেই সমস্যা নেই।
তারা বলেন, সেতুর কারণে মানুষের সময়, শ্রম কমেছে। আগে উপজেলা সদরে উঠতে যে সময় লাগতো এখন তার চেয়ে অর্ধেক সময়ে মানুষ পৌঁছাতে পারছে। সেতুর সুফল ভোগ করছে তাদের দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের প্রতিষ্ঠাতা গাজী আল ইমরান বলেন, একটি ছোট্ট উদ্যোগ হাজারো মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারে যা এই সেতুটির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। এলাকার বাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সমস্যা সমাধানে সেতুটি তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে মানুষ নির্বিঘ্নে খাল পারাপার হতে পারছে।
আগে এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ চুনা খাল পারাপারে ভোগান্তিতে পড়লেও তা এখন শান্তিতে পার হতে পারছে। স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা সেতুটি বানাতে সক্ষম হয়েছি।