চাচাকে নি:সন্তান দেখিয়ে সমস্ত সম্পত্তি নিজ নামে রেকর্ড

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:১১ | অনলাইন সংস্করণ

  বরিশাল ব্যুরো

বরিশালের উজিরপুরের কুড়লিয়া গ্রামে ২ পূত্র ও ৫ কন্যা সন্তান থাকার পরও আপন চাচাকে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যু দেখিয়ে চাচার সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন ভূমিদস্যু বিজন কুমার হালদার নামের এক ব্যাক্তি। ইতিমধ্যেই চাচার মোট সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রিও করে দিয়েছেন। নিজ বসত বাড়িসহ বাকি সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা নিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পায়তারা করছেন অভিযুক্ত বিজন হালদার। ইতিমধ্যেই তিনি ২২ লাখ টাকায় বসত বাড়ি বিক্রির বায়না চুক্তি করেছেন বলে এলাকার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এদিকে শুধু চাচাতো ভাইদেরই নয়, নিজের আপন ছোট ভাই  বিবেকানন্দ হালদারকেও বঞ্চিত করা হয়েছে সম্পত্তি থেকে। বিএস রেকর্ডে ছোট ভাই বিকেকানন্দকে না রেখে শুধু মাত্র নিজের নাম রাখায় ওই এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। চাচার সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যেই বরিশাল সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে জমি বিক্রির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন উজিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভ‚মি কর্মকর্তা কে এম ইশমাম।

সরেজমিনে জানা যায়, উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়নের কুড়লিয়া গ্রামের বাসিন্দা দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদার ও বিশ্বেস্বর হালদার দুই ভাই এস এ রেকর্ডিয় সম্পত্তির মালিক। এদের মধ্যে দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদারের ২ পূত্র ও ৫ কন্যা সন্তান এবং বিশ্বেস্বর হালদারের ২ পূত্র ও ৪ কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদারের মৃত্যুর পর তার দুই পূত্র প্রদীপ হালদার ও দ্বীপঙ্কর হালদার তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দেখা শুনা করার জন্য আপন চাচা বিশ্বেস্বরের পূত্র বিজন হালদার ও বিকেকানন্দ হালদারকে বুঝিয়ে দিয়ে বিদেশে চলে যান। এসময় চাচাতো ভাইদের জমি দেখাশুনা করার পাশাপাশি জমির ফসল ও ঘেরের মাছ নিজেরাই ভোগ দখল করে আসছিলেন চাচাতো ভাই বিজন হালদার ও বিবেকানন্দ হালদার। কয়েক বছর আগে বিজেন হালদারের আপন ছোট ভাই বিবেকানন্দ হালদারও দেশের বাইরে চলে যান।  জমির বিএস রেকর্ড শুরু হলে এ সুযোগে বিজেন হালদার তার বড় চাচা দ্বিজেন্দ্র নাথ হালদারকে নি:সন্তান অবস্থায় মৃত্যু দেখিয়ে চাচাতো ভাইদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে চাচার সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। শুধু চাচাতো দুই ভাই প্রদীপ ও দ্বীপঙ্কর হালদারকে বঞ্চিত করেই খ্যান্ত হননি ভ‚মিদস্যু বিজন হালদার। আপন ছোট ভাই বিবেকানন্দ হালদার দেশের বাইরে থাকার কারনে তার অজান্তে সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন ভ‚মিদস্যু বিজন কুমার হালদার। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

সূত্র জানায়, ইতিমধ্যেই চাচার দুই তৃতীয়াংশ ও নিজের প্রায় সমস্থ্য সম্পত্তি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ ভাবে ভারতে পাচার করেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় বিজন হালদারের দুই পূত্র এখন ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চাকদাহে বসবাস করছেন। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার করা টাকায় সেখানে বিশাল অট্টালিকা ও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, বিজন কুমার হালদার একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তার স্ত্রী সরকারী চাকরি করতেন। দুজনেই এখন চাকরী থেকে অবসরে গেছেন। চাকুরী জীবনে অর্জিত সমস্ত টাকা ও ২০ থেকে ৩০ বিঘা জমি বিক্রির সমস্ত টাকা অবৈধ ভাবে হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করেছেন। ইতিমধ্যেই চাচাতো ভাই ও নিজের সিংহভাগ জমি বিক্রি করে ফেলেছেন। এমনকি তার বসত বাড়ি পার্শ্ববত্তি কুড়লিয়া বাজারের ব্যাবসায়ী হরলাল সমদ্দারের কাছে ২২ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। ২ বছর আগে জমির মালিক বিজন হালদারকে ২২ লাখ টাকা পরিশোধ করেন ওই ব্যাবসায়ী। টাকা নেওয়ার ২ বছর পর ওই ব্যাবসায়ীর কাছে আরো ৪ লাখ টাকা দাবী করেন বিজন হালদার।  এ নিয়ে ওই ব্যাবসায়ী ও ভূমিদস্যু বিজন হালদারের সাথে মনমালিন্য চলছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এ কারনে এখন তিনি জমির দলিল দিতে টালবাহানা শুরু করেছেন।

এদিকে চাচাতো ভাইদের জমি উদ্ধারের জন্য সম্প্রতি বরিশাল সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভূমির মালিক দ্বিপঙ্কর হালদার বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। বর্তমানে ওই সম্পত্তি বেচা বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। এ বিষয়ে উজিরপুর উপজেলা সাবরেজিস্টার ইমরান খান জানান, বিজন হালদার নামের ওই ব্যাক্তি জমির দলিল দিতে এসেছিলেন। তিনি অভিযোগ পেয়ে এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওই সম্পত্তি দলিল করেননি। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিজন হালদারের ব্যাবহৃত ০১৭০৬-৬৩৮২৮৮ নাম্বারে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।