স্বামীকে জেলে পাঠিয়ে মৃত সাজিয়ে বিধবা ভাতা তুলছেন স্ত্রী
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:১১ | অনলাইন সংস্করণ
সাভার প্রতিনিধি
স্বামীকে মৃত বানিয়ে বিধবা ভাতা তুলছেন সাভারের এক নারী। বিয়ে করেছেন একাধিক। তার রয়েছে একটি সন্তান-ও। বিধবা হবার জন্যে ভোটার আইডি কার্ডে নিজের বয়স বাড়িয়েছেন পাক্কা ২৩ বছর। বাস্তবে বহুরূপী সেই নারীর বয়স মাত্র ৩১। কিন্তু ভোটের আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৫ মে ১৯৬৯ সাল।
আলোচিত এই নারীর নাম বিথি আক্তার (৩১)। তিনি বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট থানার কুলাইয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেক মোল্লা ও নুরজাহানের সন্তান। অনেকের কাছেই তার পরিচয় টিকটক বিথি নামে। কাজ করেন মিরপুরে সিটি করপোরেশনের জন্ম নিবন্ধন অফিসে। ভাড়া থাকেন সাভার পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের ছায়াবিথী এলাকার জনৈক জাহিদুর রহমানের বাড়িতে।
এখানেই ঘটনার শেষ নয়। নিজেকে স্বামী পরিত্যক্ত, বিধবা এবং দুঃস্থ নারী উল্লেখ করে মাসের পর মাস তুলেছেন বিধবা ভাতা। আবার স্বামী উল্লেখ করে যার নামে বিধবা ভাতা তুলছেন বাস্তবে সেই দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বনাবনি না হওয়ায় ভোটার আইডি কার্ড ঘষামাজা করে নিজের বয়স কমিয়ে করেছেন ৩১ বছর। আর সেটাই উল্লেখ করে সাভার মডেল থানায় স্বামী মনিরুল ইসলাম ওরফে আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে।
কেবল তাই নয়, সংসার ও একটি সন্তান আছে জেনেও ছলনা করে বিয়ে করেন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা সদরের আয়নাল হকের ছেলে মনিরুল ইসলামকে।
পুলিশ জানায়, স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার ও এক সন্তানের জনক মনিরুলকে বিথি আক্তার বিয়ে করেন ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর। বিথি আক্তারের আগের স্বামী ও সন্তান রয়েছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে দ্বিতীয় স্বামী মনির ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে আসামী করে বিথি আক্তার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলার আবেদনের ভিত্তিতে সাভার মডেল থানায় চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী একটি মামলা (নং ৭২) রেকর্ড করা হয়।
উক্ত মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিথি আক্তার নিজের বয়স উল্লেখ করেছেন ৩১ বছর। ভোটার আইডি কার্ড নম্বর উল্লেখ করেছেন ৪৬৫৯৭৫৫৭৩২। নির্বাচন কমিশনে এই ভোটার আইডি কার্ড নম্বরের খোঁজে তল্লাশী চালিয়ে দেখা যায় সেখানে তার জন্ম তারিখ ৬ মে ১৯৬৯ সাল। অর্থাৎ ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী বিথীর বয়স ৫৪ বছর!
আর এটা দেখিয়েই মাসের পর মাস বিধবা ভাতা তুলছেন তিনি।
আবার থানায় মামলা করার আগে সেই একই নম্বরের ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ কাঁটাছেড়া করে উল্লেখ করেছেন জন্ম তারিখ- ১৯৮৯ সালের ৬ মে। প্রশ্ন উঠেছে আসলে বিথীর জন্ম তারিখ কটি? আর বয়সই বা কত? তবে বাস্তবে তাকে দেখে ৫৪ বছর বয়সী পৌঢ় নারী ভাবার কোন উপায় নেই।
যোগাযোগ করা হলে সাভার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিবলীজ্জামান, বিথী আক্তার ওরফে টিকটক বিথীর বিধবা ভাতা উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিনি যে ভোটার আইডির বিপরীতে মাসে বিধবা ভাতা তুলছেন সেখান তার বয়স ৫৪। আদতে তো বিথীর বয়স ৩১!
এ বিষয়টি নজরে আনা হলে তিনি জানান, বলেন কি? এ তো আশ্চর্য্যের ব্যাপার। যদি তার বয়স নিয়ে কোন কারসাজি করা হয় তবে বিষয়টি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি অর্থ আত্নসাতের দায়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিথীর মামলায় প্রথমে এক দফা কারাগারে যান মনির। পরে আপোসের কথা বলে মনিরকে বলা হয় মামলা শেষ। কিন্তু মামলা চলমান অবস্থায় হাজিরা না দেয়ায় আবারো ফাঁসিয়ে দেয়া হলে ফের কারাগারে যেতে হয় মনিরকে। বর্তমানে তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের হাজতি হিসেবে বন্দী রয়েছেন।
মনিরের আইনজীবি আকরাম হোসেন জানান, বিধবা ভাতা নিয়মিত তুললেও তার মক্কেলকে কারাগারে এবং সতীন ইয়াসমিন আক্তারকে আসামী করে তাদের নানাভাবে চাপের মধ্যে রেখেছেন। মামলা থেকে রেহাই পাবার শর্ত হিসেবে দাবী করছেন মোটা অংকের অর্থ। অথচ বিথীর বিরুদ্ধেই ভোটার আইডি কার্ড জালিয়াতি ও সরকারি অর্থ আত্নসাতের মামলা দায়ের করা উচিৎ।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও অভিযুক্ত বিথী আক্তারের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।