রামুতে সুপারী চুরির অভিযোগে এতিম শিশুকে নির্যাতন

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:২০ | অনলাইন সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ও রামু প্রতিনিধি

বাড়ি থেকে ডেকে এনে সুপারী চুরির অভিযোগে এতিম শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। নির্যাতনের পর পুলিশ শিশুটিকে রামু থানায় দুই মাস পূর্বে দায়েরকৃত মোটর সাইকের চুরির একটি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। বর্বরোচিত এ ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকায়। এ ঘটনায় জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে গ্রামবাসী।

চুরির অপবাদে শিশুটিকে নির্যাতনকারিদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্যও রয়েছেন। শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও শিশুটির গলায় সুপারী ঝুলিয়ে ও মাথার চুল কেটে দিয়ে এলাকায় ঘুরানো হয়।

নির্যাতনের শিকার মো. বাবুল (১৬) রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সিকদারপাড়া এলাকার মৃত মঞ্জুর আলমের ছেলে। শিশুটির মা আমিনা বেগমও সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন।

মো. বাবুলের খালা রাহেলা বেগম জানান, সুপারী চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তার ভাগিনা বাবুলকে হাতুড়ি, লাটি-সোটা দিয়ে পুরো শরীরে আঘাত করেছে। এমনকি অন্ডকোষসহ শরীরের ষ্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে আঘাত করা হয়েছে। আঘাতের ফলে বাবুলের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। দুই হাত তেতলে দেয়া হয়েছে।

শারীরিক নির্যাতন ও পুলিশী হয়রানির স্বীকার মো. বাবুলের মামা মুফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বাবুল টমটম চালাতেন। গত শুক্রবার সকাল আটটায় বাবুলকে এলাকার রাকিব ও তানজিদ নামের দুই কিশোর তার টমটম গাড়িটি ভাড়া করে সুপারী নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে রাকিব, তানজিদ ও টমটম চালক বাবুলকে সুপারী চোর আখ্যায়িত করে তাড়া করেন- স্থানীয় মৃত জালাল আহমদের ছেলে জয়নাল, কবির আহমদের ছেলে কামাল, ইউসুফ জালালের ছেলে জহিরুল ইসলাম সিকদার ও ওসমান গনির ছেলে মো. হানিফ। এসময় রাকিব ও তানজিদ পালিয়ে গেলে টমটম চালক মো. বাবুলকে ধরে সুপারী চোর আখ্যা দিয়ে মারধর শুরু করা হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল হকও ঘটনাস্থলে গিয়ে মো. বাবুলকে নির্যাতন চালান এবং মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পুলিশকে অবহিত করেন। ব্যাপক মারধরের ফলে মো. বাবুল ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে থাকেন। স্থানীয়রা এ দৃশ্য দেখলেও হামলাকারিরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ছবি তোলার সাহস পায়নি। শিশু বাবুলকে নির্যাতনকারিরা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে খবর দিলে রামু থানার উপ পরিদর্শক সুনয়ন বড়ুয়া ও উপ পরিদর্শক অসীম দাশ ঘটনাস্থলে যান। এ দুজন পুলিশ কর্মকর্তা মো. বাবুলকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে রামু থানায় নিয়ে যান এবং পরে শিশুটিকে ২ মাস পূর্বে দায়েরকৃত একটি মোটর সাইকেল চুরির মামলায় জড়িত উল্লেখ করে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েকোর্টে চালান দেয়। তবে মামলার বাদি শিশুটির বিষয়ে কিছু জানেন না। বাবুলের মামা আরও জানান- পুলিশ নেয়ার পর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বাবুলের চিকিৎসা চালানো হয়। কিন্তু স্বজনদের দেখার সুযোগ দেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এ ঘটনায় অভিযুক্ত জয়নাল জানান, আমার বাগান থেকে সুপারী চুরি করার সময় পেশাদার চোর মো. বাবুল সহ ৩ জনকে স্থানীয় ছেলেরা তাড়া করে। এসময় সুপারী ভর্তি টমটম গাড়িযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাবুলকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে বাবুলকে একটি দোকানে রেখে টমটম গাড়িটি আনতে গেলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বাবুলকে মারধর করে। পরে স্থানীয় মেম্বারের কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাবুলকে আটক করে নিয়ে যায়। তবে তাকে কোন মামলায় জড়নো হয়েছে কিনা তা তিনি জানেননা। এমনকি তিনি কোন মামলাও করেননি।

শিশুটিকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে রামু থানার উপ পরিদর্শক সুনয়ন বড়ুয়া জানান, সুপারী চুরি নয়, মোটর সাইকেল চুরির ঘটনায় শিশুটিকে আটক করা হয়েছে। তিনি সরকারি কাজে জেলার বাইরে আছেন বলে দাবি করেন। 

তবে বিপরীতমুখি তথ্য দিয়েছেন অপর উপ পরিদর্শক অসীম দাশ। 

তিনি জানিয়েছেন, সুপারী চুরির অভিযোগেই জনতা বাবুলকে আটক করে পুলিশে দিয়েছিলো। কোন মামলা না থাকায় তাকে আগের মোটর সাইকেল চুরির একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে।

রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানিয়েছেন, তিনি নিজেই এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। নির্দোষ হলে এতিম হলে ছেলেটিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ারও উদ্যোগ নেবেন।  

এদিকে শিশুটির জন্মনিবন্ধনে বয়স ১৬ বছর উল্লেখ থাকলে দুইমাস পুর্বে দায়ের করা মোটর সাইকেল চুরির মামলায় ২০ বছর দেখিয়ে চালান দেয়া হয়েছে। রামু থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক এসআই সুনয়নের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবী জানিয়েছেন মানববন্ধনে বক্তারা।