নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচরের সহায়তা কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কান্নি উইগনারাজাসহ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ৯ সদস্যদের প্রতিনিধি দল।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভাসানচরে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অফিস কক্ষে আলোচনা সভায় এ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এসময় অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (ভাসনচর) মো. মাহফুজার রহমান (উপসচিব), ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম, ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পের পিডি ক্যাপ্টেন মো. হাবিব- উল-আলম, ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পের ডিপিডি কমান্ডার মোহাম্মদ আনোয়ারুল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কান্নি উইগনারাজা বলেন, ভাসানচর অনেক গুছানো ও পরিপাটি। এখানে চলমান মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমূহ সন্তোষ জনক । এসব কার্যক্রম অত্যন্ত গুছানো এবং ভাসানচর রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য উপযোগী।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (ভাসনচর) মো. মাহফুজার রহমান (উপসচিব) বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কান্নি উইগনারাজাসহ ৯ সদস্যের একটি দল ভাসানচর পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধিদল প্রথমেই অতিরিক্ত শরণার্থী এাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভায় মিলিত হন, সেখানে আমি ভাসানচর সম্পর্কে একটি চিত্র তুলে ধরি। পরে প্রতিনিধিদল ব্র্যাক ও প্রত্যাশী কর্তৃক পরিচালিত লাইভিহুড কার্যক্রম, বর্জব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, সরকারী ২০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারী হাসপাতাল এবং বিশ্বখাদ্য কর্মসূচী পরিচালিত ই-ভাউচার শপের কর্মসূচী পরিদর্শন করেন।
মো. মাহফুজার রহমান আরও বলেন, পরিদর্শন করে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কান্নি উইগনারাজাসহ প্রতিনিধিদল ভাসানচরের সহায়তা কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভাসানচর পরিপাটি ও থাকার উপযোগী বলে মন্তব্য করেন। প্রতিটি স্থানে রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করেই এমন সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। শেষে তারা বিমানবাহিনীর একটি বিমানে করে ভাসানচর ত্যাগ করেন।
এর আগে রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে হরেন্দ্র মার্কেট এলাকায় অবতারণ করেন। সেখানে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল সেলিম বাজার বেড়ির বাদ এলাকায় বিভিন্ন জেলে পরিবারের সুযোগ সুবিধা নিয়ে তাদের সাথে কথা বলেন এবং বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাবনার গল্প শুনেন। এসময় জেলেরা শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ অফিসের কনফারেন্স রুমে এসে উপজেলার সকল সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবী ও কৃষক-শ্রমিক সহ সর্বস্তরের মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় সভা শেষে জাতিসংঘ হাতিয়ার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করবে বলে জানান।
হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কান্নি উইগনারাজাসহ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ৯ সদস্যদের প্রতিনিধি দল হাতিয়ার জেলদের জীবনযাত্রার মান দেখতে আসেন। তারা জেলে নারীদের ক্ষমতায়ন ও সরকারি ভাতা পান কিনা সে বিষয়ে খবর নেন। মতবিনিময় সভা শেষে জাতিসংঘ হাতিয়ার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করবে বলে জানান।
হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, জেলেরা নদী ভাঙনের কথা জানান এবং তাদের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধার কথা প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন। প্রতিনিধিদল সব শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে কাংখিত জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারে চাপ কমাতে সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছরের ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত বিভিন্ন দফায় মিয়ানমারের ৩২ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। সরকার নিজস্ব অর্থায়ন এবং দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থাকে যুক্ত করে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।