পুকুরের নোংরা পানিতে স্বর্নজয়ী সাঁতারুদের প্রশিক্ষণ
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:২১ | অনলাইন সংস্করণ
শাহজাহান সাজু, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বছরের পর বছর ধরেই পুকুরের নোংরা পানিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় স্বর্নজয়ী সাঁতারুদের। এ উপজেলা থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয়ী হয়েছেন ১৫ জন সাঁতারু। জাতীয় পর্যায়ে চার’শয়ের অধিক স্বর্নজয়ী সাঁতারু এ উপজেলার।
নিকলী উপজেলার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক প্রাপ্ত সাঁতারুরা হলেন, কারার মিজান, কারার সামেদুল, নাজমুল হক, নিয়ামুল হক, আরিফুল ইসলাম, পারভেজ, টিটু মিয়া, জামরুল, মো. তোফায়েল, আমিরুল ইসলাম জয়, রফিকুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, কাজল মিয়া, ইসলাম, রোমানা আক্তার ও ফারজানা আক্তার।
গেলো শেখ কামাল দ্বিতীয় যুব গেমস-২০২৩ এর সাঁতার ইভেন্টে মোট ১৬ টি পদকের ১২ টিতেই জয় পেয়েছেন নিকলীর সাতারুরা।
বেশ কয়েকযুগ ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সাঁতার প্রতিযোগিতায় সুনাম কুড়িয়েও নিকলীর সাতারুরা অবহেলিত থাকায় হতাশ স্থানীয়রা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মূখ আরও উজ্জ্বল করতে একটি আধুনিক সুইমিংপুল নির্মান করে এ এলাকার সাঁতারুদের সরকারিভাবে সঠিক তদারকির দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নানান বয়েসী ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন ইভেন্টের সাঁতার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন পুকুরের ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পানিতে। প্রায় প্রতিদিনই এমন দৃশ্যের দেখা মিলে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা পরিষদের সীমানার ভিতরের দুটি পুকুরে। এদের বেশিরভাগই জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ন জয়ী সাঁতারু। জানা গেছে, এ দুটি পুকুরে সারা বছরই মাছের চাষ হয়।
অক্টোবরে চীনে অনুষ্টিত এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করবেন এদের মধ্যেই একজন। নিয়মিত মাছ চাষ করা এ দুটি পুকুরের ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে সাঁতার প্রশিক্ষণ দিয়ে চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানান অসুখে ভোগেন সাঁতারুরা।
সাঁতারু নাদিমুল হক বলেন, জাতীয় পর্যায়ে আমি পঞ্চাশটি স্বর্ণপদক পেয়েছি। অক্টোবরের ২২ তারিখে এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করতে চীনে যাবো, এজন্য সঠিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছিনা। পুকুরের ময়লা পানিতে সাঁতার কেটে আমিসহ আমার সাথের আরও প্রায় দুইশত সাঁতারুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।
নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ বলেন, নিকলীতে সরকারীভাবে সাঁতারুদের প্রশিক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় তিনজন সাবেক সাঁতারু বিনা পারিশ্রমিকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। অচিরেই সাঁতারুদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি আধুনিক সুইমিংপুল নির্মাণের পাশাপাশি সরকারিভাবে সাঁতারুদের তদারকির ব্যবস্থাসহ কোচদের সম্মানীর ব্যবস্থা করা জরুরি।
সাঁতার প্রশিক্ষক (কোচ) জলিল ও জুবায়ের বলেন, সেনাবাহিনী-নৌবাহীনিসহ বিভিন্ন বাহীনিতে নিকলীর তিন'শয়ের অধিক সাঁতারু নারী-পুরুষ কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানেও জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি পদক জয়ী সাঁতারু নিকলীর। তাই, আমারাসহ আমাদের নিকলীবাসীর প্রাণের দাবি একটি সুইমিংপুলের।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ জানান, নিকলীতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় সাঁতার একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে ইতিমধ্যেই প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ একাডেমি প্রতিষ্ঠা হলে সাঁতারুরা সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন। ভবিষ্যতে এখান থেকে আরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের সাতারু তৈরি হবে।