ঠাকুরগাঁওয়ে সৎকারে বাধা, অবশেষে গোয়াল ঘরেই দাফন

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

হিন্দু না খ্রিস্টান এই তর্কে পচাত্তর বয়সী এক বৃদ্ধার মরদেহ সৎকারে গ্রামবাসীর বাধা। ফলে মৃতদেহ বাড়িতেই পড়ে ছিল ২৮ ঘন্টা। এমন অমানবিক ও নিষ্ঠুরতার ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার  রহিমানপুর ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুৎ দাসপাড়া গ্রামে। এই দ্ব›েদ্ব শশ্মান ঘাটে সৎকারে বাধা দিতে পাহাড়া বসিয়ে বিক্ষোভ করেন গ্রামটির একদল মানুষ। 

রহিমানপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান হান্নু জানিয়েছেন, গ্রামটির একদল মানুষ কবরস্থ করতে বাধা  দেয়ায় সেখানে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আশা রাণী নামে ওই বৃদ্ধাকে তার ছেলের গোয়াল ঘরের নিকটে সমাহিত করা হয়েছে । 

আশারাণীর চাচাতো ভাই ধীরেন দাস অভিযোগ করে বলেন, আমার বোনকে যখন বাড়ির অদুরের রাধা-উষা নামে শশ্মান ঘাটে সমাহিত করতে দিচ্ছিলনা গ্রামবাসী। তখন আমরা প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরি। কিন্তু কোন ফল ফিলেনি। জনরোষ মুখে অবশেষে ‘আশারাণী’ কে গত সোমবার রাত  ৯টার দিকে গোয়াল ঘরের পাশেই কবরস্থ করা হয়। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকায় ছিলেন। 

গ্রামের মেন্দেলু দাসের স্ত্রী আশারাণী গত কয়েকদিন ধরে জ¦রে ভুগছিলেন। বাড়িতেই চলছিল তার চিকিৎসা। তবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপের দিকে যাচিছল। মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে  রোববার বিকালে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে জরুরি বিভাগে পৌছার আগেই মারা গেছেন আশা রাণী বলে জানান হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. ফিরোজ জামান জুয়েল। পরে বাড়িতে এনে রাতেই সৎকারের প্রস্তুতি নিলে বাধা দেন শশ্মান কমিটির নেতা কালো বর্মনসহ অনেকে। কালো বর্মন দাবি করে বলেন আশা রাণী, তার মৃত স্বামী ও ছেলে-মেয়ে খিস্টান ধর্মে দীক্ষিত। আশারাণীর মেয়ে দীপালি রাণী তা অস্বীকার করেন। দীপালি ও তার ভাই ধর্মান্তরিত হলেও মা আশা রানী সনাতন ধর্ম পালন করতেন। 

জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি  তপন কুমার ঘোষ বলেন, যেহেতু আশা রাণীকে দাহ করতে দেবে না , তাই একারণে তার মৃতদেহ সেখানে যেতে বাধা দেয় স্থানীয়রা। 

তবে আশারাণীর মেয়ে দীপালি রাণী জানান আমার মা’য়ের ইচ্ছে তাকে পোড়ানো না হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা সেই শশ্মানে রয়েছে, এখন কেন বাধা ? এ বলে দীপালি মূর্চ্ছা যান।

রুহিয়া থানা এলাকার ক্যাথলিক গির্জার ধর্মযাজক আনতনি সেন বলেন, ওই শশ্মানতো সরকারের। প্রশাসনের নিরবতার কারণেই আশা রাণী’কে গোয়ালঘরের পাশেই কবরস্থ করাটা দু:খজনক ও অমানবিক।
 
বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি। এর পরেই ধর্ম। হিন্দু হোক, বৌদ্ধ হোক, আর খিস্টানই হোক সবার মরদেহ সমাহিত করার অধিকার আছে। 

জানা গেছে, ওই গ্রামের ১১টি পরিবার খ্রিষ্টিয় ধর্ম পালন করেন। বাকি ১৫০ পরিবার হিন্দু ধর্ম মেনে চলেন। 

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন সেখানে আলাদা কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন।