কক্সবাজারের উখিয়ায় দেশীয় মুরগী পালনের মাধ্যমে দারিদ্রতা বিমোচনে লক্ষ্যে অসহায় ও আর্থিক ভাবে অসচ্ছল পরিবারের মধ্যে মুরগী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মুক্তি কক্সবাজার। ৯৫০ পরিবারের মধ্যে ১৩,৩০০ টি মুরগী বিতরণ করবে এনজিও মুক্তি কক্সবাজার।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এর অর্থায়নে মুক্তি কক্সবাজার এর ইম্প্রুভিং পিচফুল কো-এক্সিসটেন্স এন্ড সেলফ-রিলায়েন্স অপরচ্যুনিটিজ ফর রিফিউজি এন্ড হোষ্ট কমিউনিটি প্রজেক্টের আওতায় উক্ত মুরগী গুলো বিতরন করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর ) সকালে উখিয়া উপজেলার রাজা পালং ইউনিয়নের পূর্ব দিঘলিয়া গ্রামে মুরগী বিতরণ কার্যক্রম প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সালেহ আহমদ।
এনজিও মুক্তির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. ওসমান গনি'র সভাপতিত্বে ও প্রজেক্ট অফিসার আবিদা সুলতানা লিজা-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্টানের বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ চন্দ্র রায়, উখিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মীর সায়েদুল ইসলাম (রোমান চৌধুরী), উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, মুক্তি কক্সবাজার এর প্রজেক্ট অফিসার আলতাফ হোসেন, টেকনিক্যাল অফিসার মোঃ আজহারুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা দিলীপ সরকার ও কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর দীপা রাণী সিংহা।
এনজিও সংস্থা মুক্তি কক্সবাজার এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মো. ওসমান গনি জানান , ইউএনএইচসিআর এর অর্থায়নে আইপিসিওএসও কর্মসূচির আওতায় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ক্ষতিগ্রস্ত অতি দরিদ্র বাংলাদেশী পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে এ প্রোগ্রাম শুরু করা হয়।
এ পর্যন্ত রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের ৯৫০ পরিবারকে উপকারভোগী হিসাবে নির্বাচিত করে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও দেশীয় মুরগি বিতরন শুরু করা হয়েছে। তৎ মধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নের ৬৫৬ পরিবার ও পালংখালী ইউনিয়নের ২৯৪ পরিবার। প্রতিটি পরিবারকে ১২ টি মুরগী ও ২ টি মোরগ দেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, বিগত বছরও রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের আলাদা ১৩৫৬ পরিবারকে উপকারভোগী হিসাবে নির্বাচিত করে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও দেশীয় মুরগি বিতরন করা হয়ে ছিল। ওই সময় ১৩৫৬ পরিবারকে ১১০৮০ টি মুরগী ও ২৭৭০ টি মোরগ দেয়ার পাশাপাশি ২ তলা বিশিষ্ট মুরগী পালনের ঘর, মুরগীর খাবারের পাত্র ও ২০ কেজি মুরগীর খাবার বিতরণ করা হয়েছিল। উক্ত পরিবার গুলোর মধ্যে বর্তমানে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসায় তাদের ছেলে-মেয়েদেরও লেখাপড়া শিখানো সম্ভব হচ্ছে। স্বাবলম্বী হয়ে পুরো পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসায় তাদের পরিবারে হাসি ফুটেছে এবং এরা দেখছে এখন সুখের আলো।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মুক্তি কক্সবাজার এর সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে দেশীয় মুরগী পালন করে এই পরিবার গুলো স্বাবলম্বী হওয়ার এই সফলতা অর্জন করেছে।
মুক্তি কক্সবাজার এর প্রজেক্ট অফিসার আবিদা সুলতানা লিজা জানান, বিগত ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলমান এ কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র পরিবারগুলো কে স্বাবলম্বী করতে দেশীয় মুরগি পালনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । এছাড়াও উদ্যোক্তাদের খামারের মুরগী বিক্রি করতে মার্কেট লিংকেইজ করা হয়।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মতে, দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে মুক্তি কক্সবাজার এনজিও সংস্থার এ ধরনের কর্মসূচি উখিয়া উপজেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উখিয়া রাজা পালং ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের মৃত নুর আহমদের স্ত্রী সাজেদা বেগম স্বামীর অকাল মৃত্যু হলে ৫ ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসারে অভাব অনটন শুরু হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মুক্তি কক্সবাজার এর সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ ও উক্ত সংস্থার দেয়া দেশীয় মুরগী পালন করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছে। বর্তমানে তার রয়েছে ৫০ টির মত মোরগ-মুরগী। বাজারে বিক্রি করে আয়কৃত অর্থ দিয়ে সবজি ও ধান চাষ করে অভাব অনটন দূর হয়েছে। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসায়, তার ছেলে-মেয়েদেরও লেখাপড়া শিখানো সম্ভব হয়েছে ।
একই এলাকার মৃত আব্দুল হালিমের স্ত্রী জারিয়া খাতুন বলেন, দেশীয় মুরগী পালন করে আর্থিক স্বাবলম্বী হয়ে গবাদি পশু পালন শুরু করেছি।
তার প্রতিবেশী রোকেয়া বেগম ও সাবেকুন্নাহার সহ আরও অনেকে জানান, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে দেশীয় মুরগী পালন করে দারিদ্র বিমোচনে তারা সফলতা পেয়েছে। তাদের পরিবারে হাসি ফুটেছে ও সুখের আলো দেখতেছে । ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ হয়েছে।
তারা আরও জানান, মুরগী পালনে সফল হওয়ায় তাদের পরিবারে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, বাড়ির আসবাবপত্র সংগ্রহ ও ছাগল গরু ক্রয় করেছে। এমনকি ধান চাষ ও সবজি ক্ষেত করার জন্য জমি লিজ নিয়েছে এ সব পরিবার।