খাদ্য তালিকায় লাউ এবং লাউশাক ময়মনসিংহ অঞ্চলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এ অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় পান্যা লাউ (সবুজ লাউ) সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। পান্যা লাউ এর শাক এ অঞ্চলের মানুষদের মজাদার খাবারের অন্যতম। সকল মহলের প্রিয় খাবার তালিকায় লাউ ও লাউশাক এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে এ অঞ্চলের গৃহিণী থেকে শুরু করে কৃষকরা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায়, পতিত জমিতে সময়মতো লাউ বীজ বপণ করতে কখনো ভুল করেননা। এর মধ্যে লাউ ও লাউশাকের ব্যাপক চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষকরা অধিক লাভের আশায় লাউ ও লাউশাক চাষে বেশি মনোযোগী হয়েছেন। আবার বাণিজ্যিকভাবে লাউশাক চাষের ক্ষেত্রে চাষিদের ব্যাপক আগ্রহ দিনে দিন বাড়ছে।
স্থানীয় বাজারে লাউ ও শাক (লাউ পাতা, ডগা) এর আকাশচম্বী জনপ্রিয়তা, চাহিদার পাশাপাশি লাউশাক আর লাউয়ের বাজার দরও বেশ চড়া। তাই অধিক মুনাফার আশা করে চাষিরা আগাম (সময়ের আগেই) লাউ চাষে নেমে পড়েন। তেমন কোন রোগ-বালাইয়ে সাধারণত লাউ গাছ আক্রান্ত হয়না। ফলে অল্প সময় ও কম পুঁজিতে ভালো ফলন ও অর্থনৈতিক ভাবে লাভবানের সুযোগে এ অঞ্চলের চাষিরা আগামী দিনের স্বপ্ন বুননের পথ আগলে ধরেছেন। এতে সহজেই তাদের মুখে সাফল্যের হাসি ফুটছে। এবার লাউয়ের বাজার দর ভালো থাকায় কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন। এতে চাষাবাদে মনোযোগ বাড়ছে কৃষকদের।
সরেজমিনে নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সুতারাটিয়া গ্রামের মো. মাজহারুল ইসলাম ক্ষেত থেকে ১৫০ পিস লাউ তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানান, বর্তমান সিজনে লাউয়ের ব্যাপক চাহিদা। প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছেন। এই মৌসুমে তিনি দুই কাটা (২০ শতাংশ) জমিতে লাউ চাষ করেছেন। প্রায় দশ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সন্তুষজনক ফলন হয়েছে। এই পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। আরও ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। কৃষক মাজহারুল জানান, গত সাত বছর ধরে এই জমিতে লাউ চাষ করছেন।
অল্প পুঁজিতে কম সময়ে লাউ চাষ করে বেশ লাভবান তিনি। দুই মাসের ফসল লাউ। একই জমিতে শিম চাষ করেছেন। লাউয়ের ফসল শেষ হতে না হতেই একই মাচায় উঠে যাবে শিমের গাছ। এছাড়াও একই ক্ষেতে ভাংরী, পুইশাক চাষ করেছেন। সেগুলো বিক্রি করেও এই সিজনে আরও ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন। ওই এলাকার কৃষক সোহাগ মিয়া জানান, আমাদের এলাকার কৃষকেরা শাক-সবজি চাষ বেশি করেন। এখানকার কৃষকেরা বাড়ির পাশে, বাড়ির আঙ্গিনায়, পতিত জমিতে লাউ গাছ লাগিয়ে লাউ এবং লাউশাক বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
এছাড়াও উপজেলায় আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া, গইছখালী, ধরগাঁও, সিংদই, রাঙ্গামাটিয়া এলাকা এবং সিংরইল, মুশুল্লি, খারুয়া, বীরবেতাগৈর, চরবেতাগৈর সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে লাউ এবং লাউশাক চাষের ক্ষেত্রে চাষিদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্যনীয়। নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, এ উপজেলার আচারগাঁও, বীরবেতাগৈর, চরবেতাগৈর ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন এলাকায় লাউ ও লাউশাকের ব্যাপক আবাদ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হবে। বাজারে চাহিদা থাকায় চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এবং চাষাবাদে মনোযোগ বাড়ছে কৃষকদের।