লাগামহীন অনিয়মের আখড়া হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়। দিনের পর দিন বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান নিচে নেমে আসা, পরিচালনা কমিটির অপতৎপরতা এবং সবশেষ দাতা সদস্য নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় ১২ সেপ্টেম্বর সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সরাইল নাগরিক সমাজের সভাপতি ফিদা হোসেন রুবেল ও দাতা সদস্য প্রার্থী জহিরুল ইসলাম বাদল। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অর্থের বিনিময়ে অকৃতকার্যদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে সুযোগ এবং দাতা সদস্য নিয়োগে অনিয়মের ভয়ংকর অভিযোগ এনেছেন।
জানাযায়, গত ১৬জুলাই কুট্টাপাড়া অভিভাবক প্রতিনিধি কমিটি কর্তৃক দাতা সদস্য সংগ্রহের জন্য প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে একটি নোটিশ জারি করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থায়ী দাতা সদস্যের জন্য ২ লাখ টাকা এবং এককালীন দাতা সদস্যের জন্য ২০ হাজার টাকা জমা করার জন্য ব্যাংক ড্রাফট করার কথা বলা হয়। অথচ ব্যাংকের প্রচলিত নিয়মে ব্যাংক ড্রাফটের কোন নিয়ম নেই। এতে একাধিক দাতা সদস্য প্রার্থী ব্যাংক ড্রাফট করতে না পেরে ফিরে আসেন। পরে রতন বক্স নামে একজন দাতা সদস্য প্রার্থী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর ব্যাংক ড্রাফট প্রচলিত নয় জানিয়ে পে-অর্ডারের বিষয়টি লিপিবদ্ধ করে নতুন নোটিশ জারি করার জন্য লিখিতভাবে জানায়।
তবে প্রধান শিক্ষক বলেন, ব্যাংক ড্রাফট ব্যতীত অন্য কিছু থাকলে তা গ্রহন করা হবে না। প্রজ্ঞাপনের নোটিশকে অনুসরণ করা হবে। গত ৪ সেপ্টেম্বর অভিভাবক সদস্যদের উপস্থিতিতে বাক্স খোলা হলে এতে ২০টি খাম জমা পরে। যার মধ্যে ১৭ টিতে কোন ব্যাংক ড্রাফট, পে অর্ডার, চেক বা নগদ অর্থ কিছুই ছিলনা। ছিল সাদা কাগজ। আর বাকি ৩টি খামে ছিলো এনসিসি ব্যাংকের পে-অর্ডার।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বাক্স সিলগালা করার আগে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য হোসেন আলী ৩টি খাম বাক্সে ফেলেন আর বাকি ১৭টি খাম সম্মিলিতভাবে ফেলেন হোসেন আলীর ছেলে মিশাল ও অপর সদস্য সাইদুল ইসলাম বাশার। অভিযোগে বলা হয়, এই মহলটি নিজেদের মধ্যে দাতা সদস্য নির্বাচিত করতে এবং প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের বিভ্রান্ত করতে এই কৌশল অবলম্বন করে প্রতারণা করে। নিয়মানুসারে ওই গোপন বাক্সের সামনে বিদ্যালয়ের প্রহরী ছাড়া অন্য কেউ না থাকার কথা থাকলেও সেখানে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ৩ সদস্যের অবাধ বিচরণ ছিলো। শুধু তাই নয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য হোসেন আলীর ছেলে মিশেলকে সকাল থেকেই বাক্সের সম্মুখে পাহারারত রাখা হয় যাতে অন কেউ ব্যাংক ড্রাফট ফেলতে না পারে এবং কেউ দিলেও সেটা যেন গননা করতে পারে। পরিচালনা কমিটির সদস্য হোসেন আলীকে দাতা সদস্য করতেই তারা এই কৌশল গ্রহন করে।
এছাড়াও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়। এতে ১৪৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেবল ৩২ জন এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়।
এদিকে ঘটনা জানাজানির পর ১৪ সেপ্টেম্বর সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুট্টাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিক উদ্দিন ঠাকুর উপজেলা অফিসে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে গোপনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে।
সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুট্টাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিক উদ্দিন ঠাকুর (০১৭১১৮২৮৫১৮) মুঠো ফোনে বার বার ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
কুট্টাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খোরশেদ আলম বলেন, দাতা সদস্য সংগ্রহের বিষয়টি আপাতত শিথিল রয়েছে। ভূয়া কাগজ পেয়ে সেগুলো রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের অনিময়ম বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির তদন্ত করছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।