প্রতিটি আড়তেই বিক্রি হচ্ছে দুইটন ইলিশ

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

  চাঁদপৃর প্রতিনিধি

পদ্মা-মেঘনা নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে এ এলাকার জেলেরা বলছে, চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনায় রূপালী ইলিশ ধরা পড়তে শুর হয়েছে তাদের জালে। এতে তারা জেলেরা দীর্ঘদিন প্রতিক্ষার পর ও হতাশায় দিন পাড় করলেও এখন অনেক খুশিও আনন্দিত। চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীর জেলেদের জেলে পাড়ায় এখন আনন্দের বন্যা ও উ্ৎসবের আমেজ চলছে। জেলে পরিবারের সদস্যরা এখন অনেক খুশি। তবে তাদের কথা আগামী অক্টোবরের প্রথমেই মা’ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা আসছে। তারা বেশী দিন সময় পাবে না ইলিশ ধরার।

শহরের বড় স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দক্ষিণাঞ্চলের আমদানি করা ইলিশ বিক্রি হলে স্থানীয় আড়ৎগুলোতে বিক্রি হয় পদ্মা-মেঘনার ইলিশ। এসব ইলিশ জেলেরা সরাসরি নদী উপকূলীয় ছোট আড়ৎগুলোতে এনে বিক্রি করেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাটে ইলশের ভর মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই টন (৫০মণ) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তবে এসব ইলিশের খুচরা ক্রেতাই বেশী। 

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর হরিণা ফেরিঘাটের মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখাগেছে বেশীরভাগই খুচরা ক্রেতা। এছাড়া অল্প কয়েকজন মৎস্য ব্যাবসায়ী রয়েছেন যারা জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ ক্রয় করে শহরের বাজারগুলোতে এবং পরিচিতি আত্মীয় স্বজনের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।

ঘাটে ইলিশ বিক্রি করতে আসা সদরের ল²ীপুর ইউনিয়নের দোকানঘর এলাকার জেলে লোকমান ও বারেক খান জানান, তারা সকালে ছোট নৌকা নিয়ে মেঘনায় ইলিশ আহরণে নেমেছেন। দুপুর পর্যন্ত যে কয়টি ইলিশ পেয়েছেন বিক্রি করেছেন ১৫০০টাকা। খরচ গিয়ে তাদের দু’জনের থাকবে ১১শ’ টাকা। 

একই ইউনিয়নের বহরিয়া এলাকার জেলে আমিনুল ইসলাম ও আবদুল জলিল জানান,পদ্মা-মেঘনা নদীতে নেমে তারাও সকাল থেকে পাওয়া ইলিশ বিক্রি করেছেন ১৩০০টাকা। এক সপ্তাহ আগে পদ্মা-মেঘনায় তেমন ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে কিছু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। যারা বড় নৌকা নিয়ে ইলিশ ধরতে সাগর এলাকায় যান তারা পরিমাণে বেশী পান। ওই সব নৌকায় জেলে থাকে ১০-১৫জন।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার নয়ার হাট থেকে এই আড়তে ইলিশ ক্রয় করতে আসা তসলিম হোসেন বলেন, এখানে আসলে জেলেদের ধরে আনা তাজা ইলিশ ক্রয় করা যায়। দাম বেশী হলেও ভেজাল নেই। এক কেজি ওজনের ইলিশ আজকে ক্রয় করেছি ১৭০০টাকা করে। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হয় ৫৫০-৭০০টাকা। সাইজ অনুসারি প্রতি হালি ইলিশের দাম উঠে। 

হরিণা আড়তের প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ছৈয়াল জানান, ইলিশ মৌসুমে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার দুই পাড়ে কমপক্ষে ২০০ ছোট বড় আড়তে ইলিশ বিক্রি হয়। এখন ইলিশ কম-বেশী পাওয়া যাচ্ছে। তবে নদীতে পানি কমে যাচ্ছে। এরপর আগামী অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে শুরু হবে মা’ ইলিশ রক্ষায় অভিযান। তখন জেলের অবসর হয়ে পড়বে। যদি ভাগ্য ভাল হয় আরো ২০-২৫দিন জেলেরা ইশিল ধরতে পারবে।

অপর আড়তদার মোক্তার হোসেন বলেন, এই আড়তে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই টন ইলিশ বিক্রি হয়। অর্থাৎ ৩৭-৫০মণ। গড়ে ১ হাজার টাকা কেজি মূল্য হলে ৫০ মণের আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ২০ লাখ টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে খুচরা ক্রেতার সংখ্যাই বেশী। এখানে জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসলে হাকডাক দিয়ে মুহুর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। ইলিশ জমিয়ে রাখার কোন সুযোগ থাকে না। যে কারণে আমাদেরকে ইলিশ বরফ দিয়ে রাখতে হয় না। তাজা ইলিশ ক্রয় করার জন্য জেলা সদর, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে অনেক ক্রেতা আসে প্রতিদিন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের আড়তে আজকে ১ কেজি ১০০-২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে ১৭০০টাকা। আর ৭০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ প্রতিকেজি ১২০০ থেকে ১৩০০টাকা। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হয় ৫৫০-৭০০টাকা।

চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম বলেন, জেলেদের সাথে কথা বলে জেনেছি তারা এখন কম-বেশী পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ পাচ্ছে। যাদের ইলিশ ধরার জালের ফাঁদ বড় তারা বড় সাইজের ইলিশ পায়। আর যারা কারেন্টজাল অথবা অন্য জাল দিয়ে মাছ ধরে তারা ছোট ইলিশ পায়। তবে অনেক জেলে ইলিশ পেলেও বলতে চায় না পেয়েছি। চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সাগরের ইলিশ আসলেও স্থানীয় আড়তগুলোর ইলিশ সব পদ্মা-মেঘনার। এসব ইলিশের স্বাদ বেশী হওয়ায় চাহিদাও বেশী, ক্রেতাও বেশী দেখা যায়।