চাঁদপুর-চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী আন্ত:নগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভিতরে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব ও আক্রমনে যাত্রীদের মধ্যে মারাত্মক আতংক বিরাজ করছে। এতে করে এ পথের যাত্রীর সংখ্যা দিনদিন কমছে। যার ফলে সরকার প্রতিদিন বিরাট অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। এ ট্রেনের পরিচারকরা তাদের দায়িত্ব পালনেও অবহেলা করতে দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালন রেখে নিজেদের পকেটভারী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে বলে যাত্রীদের মধ্য থেকে অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করা না হলে সরকার মাসের পর মাস লোকসান গুনতে হবে এবং রাজস্ব হারিয়ে রেলওয়ে দেউলিয়া পড়ার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।
এ রেলপথে ট্রেনের সেবার মান অবনতির কারণ জানতে গিয়ে দেখা গেছে, চাঁদপুর-চট্টগ্রামের মধ্যে দায়িত্বে থাকা টিএক্সআর বিভাগের কর্মচারীরা তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব ও আক্রমণ বেড়েছে। এ ছাড়া ট্রেন ঠিকমত পরিচ্ছন্ন ঘরে নিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছেনা এবং প্রতিদিনই কোন রকম ওপর দিয়ে পরিস্কার করা হচ্ছে। ট্রেনের পরিচারকরা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার কারণে যাত্রীরা ট্রেনে উঠে তাদের কাছ থেকে যে সেবা পাওয়ায় নিয়ম তা দিচ্ছে না। তারা শুধু ট্রেনের কোন আসন খালি আছে, সেখানে কিভাবে টিকিট বিহীন যাত্রীদের বসিয়ে তাদের কাছ থেকে কিভাবে উৎকোচ গ্রহন করা যায় সেকাজে ব্যাস্ত থাকতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে পথের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদাসিনতার কারণে এবং তারা ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করার ফলে যাত্রী সাধারণ প্রতিদিন তাদের জীবনের নিরাপত্তা হীনতার মধ্যদিয়ে যাতায়ত করছেন।
খোজ নিয়ে এবং একাধিক যাত্রীর সাথে আলাপ করে জানাগেছে, চাঁদপুর-চট্টগ্রামের মধ্যে আন্ত:নগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দীর্ঘ বহু বছর যাবত সকাল ৫টায় চাঁদপুর থেকে ছাড়ে আর বিকেল সোয়া ৫টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে এ পথে চলাচল করে যাত্রী সেবা দিয়ে গেলেও ইদানিং কালে এ পথের যাত্রীরা তাদের কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত। দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যয় চাঁদপুর-চট্টগ্রামে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া চাঁদপুর-চট্টগ্রামে যে পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে আবার মৃত্যুর ঘটনাও প্রতিদিন ঘটছে। চাঁদপুর-চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী মেঘনা ট্রেনে ডেঙ্গু মশার উপদ্রবের কারণে অনেক যাত্রী আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এ পথের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ট্রেনে ডেঙ্গু মশাসহ সবধরণের মশার উপদ্রব ও আক্রমন অব্যাহত আছে। যাত্রীরা আতংতের মধ্যে যাতায়ত করতে হচ্ছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টায় চাঁদপুর থেকে চট্রগ্রাম যাওয়ার সময় হঠাৎ মেঘনা ট্রেনে ডেঙ্গুর উপদ্রব লক্ষ করা গেল। যাত্রীরা যখন ট্রেনের আসনে বসতে গেল ঠিক সেই সময় প্রথম শ্রেনীর কক্ষের ৫৪ নম্বর ও ৫১ নম্বর আসনে দুটি ডেঙ্গু মশার সন্ধান মিলে। একটি ডেঙ্গু মশা যাত্রীর রক্তখেয়ে ৫৪ নম্বর আসনে জীবিত অবস্থায় তার শরীরে রক্তনিয়ে বসে আছে। আর অপর ৫১ নম্বর আসনে একটি ডেঙ্গু মশা যাত্রীর রক্তখেয়ে শরীরে রক্তনিয়ে মরে আসনের ওপরে পড়ে রয়েছে। এতে ধারণা, ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে যে কোন ব্যক্তির শরীর থেকে ডেঙ্গু মশা রক্ত খেয়ে সেখানেই ছিল। যার ফলে ১৫ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টায় ট্রেনে রক্ত খাওয়া মশা পাওয়া যায়।
এ ট্রেনের ৫০ নম্বর আসনটি ছিল একজন সংবাদ কর্মীর। তিনি হচ্ছেন শওকত আলী নামীয় ব্যক্তি। এ সময় পুরো ট্রেনে ডেঙ্গুর উপদ্রবের কথা ছড়িয়ে পড়ে আর সকলের মাঝে আতংক বিরাজ করতে থাকে।
ডেঙ্গ মশার বাস্তব ঘটনার বিষয়টি ট্রেনের একজন পরিচারককে জানালে তিনি বলেন, আসনটি টিস্যু দিয়ে মুছেদেন, আর জানালা খুলেদেন ডেঙ্গু মশা চলে যাবে। এ ট্রেনের ৫১ হতে ৫৪ নম্বর আসনগুলো হচ্ছে দুবাই প্রবাসী চাঁদপুর শহরের উত্তর শ্রীরামদী এলাকার বল্লব বাবুর ছেলে কালু দের পরিবারের সদস্যদের। তার পরিবারের সদস্য ছিল ৫জন। টিকিট করেছিল ৪টি। এ জন্য টিকিট চেকিংয়ের সময় তাদের শিশু সন্তানের হাফ টিকিটের জন্য ১৫০ টাকা তাদের কাছ থেকে আদায় করেন এ ট্রেনের টিটিই।
এ ট্রেনে আরো যাত্রী ছিলেন চাঁদপুর আদালতের আইনজীবী হারন-অর-রশিদ পরিবার (কালা হারুন) ও আইনজীবী জসিম উদ্দিন মিঠু পরিবারসহ প্রায় ৮-১০ জন আইনজীবী মেঘনা ট্রেনে চট্রগ্রাম গিয়েছেন। এ ছাড়া ওই দিনের পর থেকে চাঁদপুর-চট্রগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী আন্ত:নগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে ডেঙ্গুর আতংক বিরাজ করছে।
এ ঘটনার পরও গত ১৭ সেপ্টেম্বর ট্রেনে ডেঙ্গু মশা পাওয়া গেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিচারক এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে মেঘনা ট্রেনের যাত্রীরা ও সচেতন মহল মনে করেন, চট্টগ্রাম স্টেশন অথবা চাঁদপুর থেকে ট্রেনে ডেঙ্গু মশা উঠে। তা নাহলে ট্রেনটি চলন্ত অবস্থায় বিভিন্ন স্টেশনে বিরতির সময় ট্রেনের পাশে যে ঝোপঝাড় বা জঙ্গল আছে, সেখান থেকে ডেঙ্গু মশা ট্রেনে প্রবেশ করতে পারে। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রদক্ষেপ গ্রহন করা একান্ত প্রয়োজন বলে ট্রেনের যাত্রীরা কর্তৃপক্ষের দৃস্টি কামনা করেছেন।
চট্টগ্রামের স্টেশন মাস্টার জাফর আলম বলেন, ট্রেনের ভিতর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব টিএক্সআর এর। যেহেতু শুনেছি ট্রেনে ডেঙ্গুর উপদ্রব, সেহেতু ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এটা যেহেতু টিএক্সআর এর কাজ, তাকে দিয়েই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রেনে ডেঙ্গুর উপদ্রব কর্তৃপক্ষকে কেন জানানো হলো না সে বিষয়ে ট্রেনে কারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জেনে তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেঘনা ট্রেনের দায়িত্বরত পরিচালক (গার্ড) আব্দুল আখের অপু বলেন, ট্রেনের ভিতর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ট্রেনে স্প্রে করার দায়িত্ব টিএক্সআর ও তার অধিনস্থ স্টাফদের। ট্রেনের ভিতর ডেঙ্গু মশার উপদ্রব দেখা দিলে, তারা প্রয়োজনে মশার ঔষধ স্প্রে করতে হবে। তাহলে মশার উপদ্রব থাকবে না। এতে যাত্রীরা তাদের সঠিক সেবা পাবে।
চাঁদপুর স্টেশন মাস্টার শোয়েবুল শিকদার এই প্রসঙ্গে বলেন, চাঁদপুরে ট্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য পরিচ্ছন্ন ঘর (ওয়াশ ফিট) প্রয়োজন থাকলেও এখানে কোন পরিচ্ছন্ন ঘর নেই। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন যেভাবে পরিস্কার করে পাঠানো হয় সেভাবে চাঁদপুরে আসে। এখানে পানি ছাড়া সারণভাবে পরিস্কার হয়। তবে ট্রেনে মশানিধনের ঔষধ ছিটানো হয়। এ কাজটির দায়িত্বে রয়েছেন হেড টিএক্সআর ও তার অধীনস্থ স্টাফ। আমাদের না। বিষয়টি জানলাম। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
চাঁদপুরের হেডটিএক্সআর জাকির হোসেন বলেন, চাঁদপুরে ট্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য পরিচ্ছন্ন ঘর নেই। ট্রেনে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব সেটা আমার জানা নেই। ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে আসার পর প্রতিদিন ড্রাই ক্লিলিন করা হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন ঝাঁড়ু দেওয়া, আসন মোছা, বাথরুম পরিস্কার হয়ে থাকে।
এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমি লাকসাম থাকি। চাঁদপুরে আমাদের কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে হয়তো, ড্রাই ক্লিলিন না হওয়ার কারণে মশা আসনে বসে থাকতে পারে। আগামীতে প্রতিদিন ট্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা হবে।