এবার কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল প্রকাশ্যে মারধর করেছেন সমাজ সেবা কার্যালয়ের এক ইউনিয়ন কর্মীকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওর সূত্র ধরে মারধরে শিকার ওই কর্মীকে শনাক্ত করে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ঘটনাটি এক মাস আগের উল্লেখ করে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে একজনকে প্রকাশ্যে কিল-ঘুষি-লাফি মারছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল। মারধরে শিকার ব্যক্তিকে নিজকে রক্ষা করতে নানাভাবে চিৎকার দিচ্ছেন। ভিডিওটিতে বিস্তারিত কিছুই না জানিয়ে লেখা হয়েছে, ‘কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদে সমাজসেবা অফিসারকে প্রকাশ্যে মা-র-ধ-র’।
ভিডিওর সূত্র ধরে দফায় দফায় একাধিক ব্যক্তি ও কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে মারধরে শিকার ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি কক্সবাজার সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অধিনে একজন ইউনিয়ন কর্মী। মোর্শেদ আলম নামের এই যুবক কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখালী, পোকখালী ও পিএমখারী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে গত ১৬ আগস্ট বেলা ১১ টা থেকে ১২ টার মধ্যে।
বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলতে রাজী নন মারধরে শিকার মোর্শেদ আলম। তিনি যেন এখন অজানা আতংকে রয়েছেন। ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী, মোর্শেদের কয়েকজন সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজী নন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব মানুষ জানান, মোর্শেদ প্রতিদিনের মতো ১৬ আগস্ট কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনের এক পাশে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছোটন নামের এক সহকর্মীর সাথে কথা বলছিলেন। এসময় মোর্শেদের পেছন থেকে এসে পরিষদে প্রবেশ করছেন চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল। ছোটন চেয়ারম্যানকে দেখে সালাম জানালেও মোর্শেদ তা দেখেননি। ফলে সালাম না দেয়ার অপরাধে জুয়েল প্রকাশ্যে মারধর করেন মোর্শেদকে। এসে মোর্শেদের মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়েছে যায়। যদিও রক্তাক্ত হওয়ার দৃশ্যটি ভিডিওতে নেই। সহকর্মীরা মোর্শেদকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নথিপত্রে দেখা গেছে ওই ১৬ আগস্ট বিকাল ৩ টার পরেই মোর্শেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মোর্শেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, টানা ১০-১২ দিন চিকিৎসা শেষে মোর্শেদ ফিরলেও নানা হুমকির কারণে বিষয়টি নিয়ে কোথাও কোন অভিযোগ করেননি।
অথচ এ ধরণের একটি মারধরের ঘটনা নানাভাবে শুনেছেন বলে স্বীকার করেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, কক্সবাজার জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাসান মাসুদ। তবে এই দুই কর্মকর্তার দাবি ঘটনায় শিকার ব্যক্তি কোন অভিযোগ বা মৌখিকভাবে তাদের বিষয়টি স্বীকার করেননি।
কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, নিজ পিতাকে বঙ্গবন্ধুর সহ দাবি করে আলোচনায় আসেন। সর্বশেষ কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে একভাই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচন করেন। যে নির্বাচন জুড়ো একই পরিবারের ৪ ভাই এক বোন দল থেকে বহিষ্কার হন। এর মধ্যে প্রকাশ্যে একজনকে মারধর করে আলোচনায় এলেন কায়সারুল হক জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে আলাপের জন্য কায়সারুল হক জুয়েলের ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে তিনি এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারের বাইরে অবস্থান করছেন।##