বেড়েই চলেছে চুরি-ছিনতাই, নিরাপত্তাহীনতায় সখীপুরবাসী   

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

  সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় দিন দিন বেড়েই চলেছে চুরি, ছিনতাইসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। কোন রকমেই থামছে-না এসব ঘটনা। চুরি, ছিনতাই সহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ স্থান হিসেবে এ উপজেলাকে বেছে নিয়েছে অপরাধীরা। চুরি ও প্রকাশ্যে ছিনতাই বর্তমানে এখানকার নিয়মিত ঘটনা। বাসা-বাড়িতে ঢুকে গৃহপালিত পশু থেকে শুরু করে মোবাইল, মোটরসাইকেল চুরি সহ ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরহ ঘটলেও থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন? 

নিজেদের জান-মালের নিরাপত্তার দাবিতে আজ বিকেলে উপজেলার শোলাপ্রতিমা বাজারে স্থানীয় এলাকাবাসীর আয়োজনে মানববন্ধন হওয়ার কথা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার শোলপ্রতিমা এলাকার ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেনের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাত দল পরিবারের সবার হাত-পাঁ বেধেঁ ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নেয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বানিয়ারছিট এলাকার আবুল কাশেমের বাড়িতে সিঁধ কেটে স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা চুরি হয়। একই রাতে ওই এলাকার নজরুল ইসলাম ও দামিয়া পাড়ার রবিন মিয়ার ঘরেও চুরির চেষ্টা করে চোরচক্রটি।

আরও জানা যায়, গত বুধবার চেতনানাশক স্প্রে করে কচুয়া পূর্বপাড়া প্রবাসী ম‌জিদ মিয়ার বা‌ড়ি‌তে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইলসহ প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি টাকার মালামাল চুরি হয়। এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দিন-দুপুরে নিজের উপার্জনের একমাত্র সম্বল অটোগাড়িটি ছিনতাই হয় জাহিদের। পৌরশহরের সিকদার রোড থেকে যাত্রীবেশে অটোটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অটো হারিয়ে এখন নিঃস্ব জাহিদ। এছাড়া গত ১২ সেপ্টেম্বর পৌরসভার মুখতার ফোয়ারার ঝর্ণার কল চুরি হয়। এঘটনায় পারভেজ আহমেদ পাপ্পু (২৪) নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। 
অন্যদিকে গেল কয়েক মাসে সখীপুর থেকে প্রায় ৪০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। গত ২২ আগস্ট উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের রামখা এলাকার প্রবাসী নুরু মিয়ার বাড়িতে ভয়ঙ্কর চুরির ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় নগদ ১৬ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণলঙ্কার চুরি হয়। সে ঘটনায় জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চালককে নেশা দিয়ে অটো ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয় গেল ৩ সেপ্টেম্বর। উপজেলার বেতুয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় কাদের মিয়ার চায়ের দোকান সংলগ্ন গজারি বনের কাছে এ ঘটনা ঘটে। 

সূত্র জানায়, প্রায় সবকয়টি চুরি একই ধরনের। উপজেলায় কয়েকটি চোর ও ছিনতাকারী গ্রুপ রয়েছে। এরা বিভিন্ন এলাকায় অপকর্ম করে বেড়ায়। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে,  উপজেলা জুড়ে ব্যাপকভাবে চুরি, ছিনতাই, খুনসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটনা ঘটছে। যার ফলে পুরো উপজেলার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। এ উপজেলার অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে।

স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদারকি ও টহল না থাকার কারণে প্রায় চুরির ঘটনায় ঘটছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে একটি উপজেলা চলতে পারে না। আমরা এখন অনেক ভয়ে থাকি। অতি দ্রুত সংঘবদ্ধ চোরদের গ্রেফতার করা না হলে চুরি থামবেনা।

ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, জানালার গ্রিল কেটে ১০ থেকে ১২ জন রুমে ঢুকে পরিবারের সব সদস্যের হাত-পা বেঁধে মুখ গামছা দিয়ে আটকে দেয়। এরপর তারা নগদ আড়াই লাখ টাকা, ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, দামি তিনটি স্মার্ট ফোন ও ব্যবসার জন্য মজুদ করে রাখা কাপড়সহ ২০ লাখ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল বলেন, উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে চুরি ও ছিনতাইয় এবং অপরাধ বেশি হচ্ছে। পুলিশ তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পাচ্ছে না। আশা করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসবের দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

সখীপুর থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) রেজাউল করিম জানান, সবার বিষয়েই আমরা কিন্তু তথ্য নিচ্ছি। সখীপুরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে এমন কিছু লিখেন না। তাছাড়া আপনার যা মনে হয় তাই লিখেন। তবে সবকয়টি ঘটনাই পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ফারজানা আলম বলেন, যৌথ অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।