রংপুরে আলুর বাজারে ফিরেছে স্বস্তির বাতাস

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

অস্থিতিশীল আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলুর কেজিপ্রতি হিমাগার পর্যায়ে মূল্য ২৬-২৭ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। পরে ভোক্তা অধিকার, জেলা প্রশাসন, এনএসআই সাড়াশি অভিযানের এবং ব্যবসায়ীরা সহনশীল মনোভাবের কারণে রংপুরের আলুর বাজারে কিছুটা স্বন্তির বাতাস বইছে।

আজ সোমবার রংপুরের বাজারসমূহে খুচরা পর্যায়ে আলু ৩৮-৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০-১২ টাকা হ্রাস পেয়েছে।সকলে আশা করছেন আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে তৃণমূলের মানুষ সরকার নির্ধারিত মূল্যে পাবে।

সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি কার্যক্রম তদারকিতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর,জেলা প্রশাসন, এনএস আই। হঠাৎ করে দুই সপ্তাহ ধরে খুচরা ও পাইকারি বাজারে আলুর দাম বৃদ্ধি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছিল কতিপয় মজুদদার ও ব্যবসায়ীরা। আলুর দাম ওঠায় জনগণের নাভিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিলো। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এর পরেই মাঠে নামে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

তারা রংপুর নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে। জেল ও জরিমানাসহ কয়েকজনকে আটকও করা হয়। এতে করে বাজারে প্রকারভেদে ৮ থেকে ১০ টাকা দাম কমে। ফলে স্বস্তি প্রকাশ করেছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীসহ সাধারণ ক্রেতারা। তারা অভিযান কার্যক্রম আরোও জোরালো করার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও শাক-সবজি সহ অন্যান্য কাঁচামাল জাতীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

তবে গত কয়েকদিনের ভারিবৃষ্টি পাতের কারণে শাক-সবজির দাম বাড়ার আশংকা করছেন ক্রেতারা।

সরেজমিনে রংপুর নগরীর সিটি বাজার, ধাপ বাজার, লালবাগ ও কামাল কাছনা সহ কয়েকটি বাজার ঘুরে জানাগেছে, গত দুই সপ্তাহ আগে  বাজারে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজির আলু বিক্রি হচ্ছিল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। হঠাৎ করে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন নি¤œবিত্ত শ্রমজীবিসহ ক্রেতারা। এর পরেই নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ প্রশাসন। এসময় নগরীতে দুইটি হিমাগারে অভিযান পরিচালনা করে মজুতদারসহ কয়েক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যবসায়ীদের সর্তক করা হয়। কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আটকও করে তারা। এর পরেই কাটিনাল ও ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন আলুর দাম কমতে শুরু করে। তবে দেশী জাতীয় আলুর দাম অপরিবর্তিত রয়েছেন।

এদিকে সিটি বাজারে পাইকাররা কার্টিনাল আলু ৩৫-৩৬ টাকা কেজি, শিল আলু ৪৭-৪৮ টাকা, ঝাউ ৫৪-৫৫ কেজি বিক্রি করছেন। এছাড়া পেঁয়াজ (এলসি) ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, মরিচ ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

খুচরা বাজারে কার্ডিনাল আলুর ৩৮-৪০ টাকা, সাদা দেশি আলু ৫০-৫২ টাকা এবং ঝাউ ৫৫-৬০ টাকা, শিলআলু ৫০-৫৫ টাকা টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম আরোও কমতে পারে বলে ধারণা করেছে সংশ্লিষ্টরা।এছাড়াও শাক-সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

বিক্রেতারা বলছেন, আলুর বাজার বড় বড় কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা নিয়ন্ত্রণ করে। এখন ভোক্তা অধিকারসহ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নামাতে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, একারণে দামও কমতে শুরু করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরোনো আলুর মজুত আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। একারণে পুরোনো আলুর সরবরাহ কমানোর চেষ্টা করেছিল একটি চক্র। তবে এখন সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে নগরীর বাহিরে গ্রামঞ্চল গুলোর হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শুধু আলু নয় ডিম ও পিঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চড়া দামে বিক্রি করছে। অভিযানের সময় দাম কমলেও তারা পড়ে আবার চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে সরকারের তৎপরতায় অনেকটা দাম কমে এসেছে।

নগরীর মুলাটোল এলাকার রিজু ইসলাম ও বাহার কাছনা এলাকার মাহমুদুল মানিক মিয়া বলেন, হঠাৎ হঠাৎ বাজারে নিত্যপন্যের দাম বাড়ে। সম্প্রতি আলুর দাম ক্রেতাদের নাগালের বাহিরে চলে যায়। এজন্য অনেকেই আলু কেনা বন্ধ করে দেন। সরকারি নজরদারি ও ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের পর কিছুটা আলুর দাম কমেছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক আজহারুল ইসলাম জানান, সরকারের বেঁধে দেয়া দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে কাজ করছি আমরা। রংপুরের হিমাগারগুলোতে মজুমদারের সতর্ক করে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, শনিবার থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে। পর্যায়েক্রমে সবগুলো বাজারেই হবে। কেউ সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে বিক্রি করতে পারবে না। এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবগুলোকে বাজারে একযোগে ৩৬ টাকা কেজিতেই আলু বিক্রি হবে।