রংপুর নগরীর বর্ধিত এলাকায় বেড়েছে সাপের উপদ্রব

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫১ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

বর্ষা মৌসূম শুরুর সাথে সাথে রংপুর মহানগরী বর্ধিত এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ী ও  পথেপ্রান্তরে বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়েছে। গোখড়া, কালাচ, কিং কোবরা, গোমা, ডারাইস, কেউটে ও ধোরা সাপসহ অন্যান্য সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। এসব সাপ গর্ত থেকে বেড়িয়ে এখন লোকালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে সাপে কাটার আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সাপের ভয়ে রাতের বেলা চলাচল বন্ধ করেছে দিয়েছেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন মানুষজন।

সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে রংপুর নগরীর ৩১, ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ড গুলোর তামপাট ও দর্শনার  এসব এলাকায় বিষধর সাপের উপদ্রপ বাড়ছে। এক সপ্তাহে দুজনকে সাপ ছোঁবল দিয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। এদিকে হঠাৎ করে সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় শিশু, বৃদ্ধসহ অনেকেই আতংকিত হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও রংপুরের মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া এলাকায় সাপের আতংক দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে সাবেক ১৫টি ওয়ার্ড মূল নগরীতে। বাকি ১৮টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকাই গ্রাম এবং সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ। সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাগুলোতে ঝোপঝাড় ও পুকুর নালা বেশি হওয়ায় সেখানে সাপ নিরাপদ আশ্রয় স্থান খুঁজে পেয়েছে। এসব এলাকায় ইদানিং সাপের উপদ্রবে মানুষজন আতঙ্কিত। সাপের ভয়ে অনেকেই রাতে চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছেন।

সম্প্রতি নগরীর ৩২ নং ওয়ার্ডে দুজনকে সাপ ছোঁবল দিয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। এছাড়াও ৩৩,৩১ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে নগরীর আরাজি তামপাট এলাকার দুলাল মুন্সীর বাড়ি সংলগ্ন আবদুর রশিদের ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন (৩৬) সাপের ছোঁবলে মারা যান। এরপর বড় রংপুর এলাকার গফুর মিয়ার স্ত্রী পেয়ারি বেগমকে সাপ ছোঁবল দেয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হন। গত বুধবার বড় রংপুর এলাকার আকবর আলীর বাড়িতে সাপ দেখা গেছে। পরে স্থানীয়রা ওই সাপটি মেরে ফেলে। স্থানীয় দুলাল মুন্সীর বাড়ি সংগ্লণ একটি দোকানের সামনেও সাপ দেখা যায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বড় রংপুর এলাকার মোশারফ হোসেনের বাড়িতে দুটি সাপের আনাগোনা দেখা যায়। পরে স্থানীয়রা সাপ দুটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

এছাড়াও আরাজী তামপাট, বড় রংপুর, কাইদাহারা, নগর মীরগঞ্জ, দোলাপাড়া, মেকুড়া, হোসেন নগর, বকচি, দর্শনা এলাকার শেখপাড়া, বনগ্রাম, পানবাড়ি, ঘাঘটপাড়াসহ জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ, লহনী, ভক্তিপুর, শালমারা, মিলনপুর, ছড়ান, বালারহাট, ভাংনী, পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা, টুকুরিয়া, চৈত্রকোল, রায়পুর, কাবিলপুর, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা, তাম্বুলপুর, ইটাকুমারী, কাউনিয়ার হারাগাছ, শহীদবাগ, বালাপাড়া, টেপামধুপুর এছাড়াও গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে আতংকে দিনানিপাত করছে এলাকা গুলোর মানুষজন। তবে সাপ নিধনে সরকারি কোন উদ্যাগ দেখা যায়নি বলে স্থানীয় জানিয়েছেন।

নগরীর ৩২ নং ওয়ার্ডের আরাজী তামপাট এলাকার আশরাফুল আলম ও হুমায়ন রশিদ শাহীন বলেন, সম্প্রতি সাপের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। এক যুবক মারা গেছে। কয়েকটি সাপ স্থানীয়রা মেরে ফেলেছে। এতে স্থানীয় মানুষজন আতংকে রয়েছেন। তারা সাপ নিধনে সংশ্লিষ্ট দফতরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বড় রংপুর এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান সজিব ও মোশারফ হোসেন রাজু বলেন, যত্রতত্র সাপ দেখা যাচ্ছে। মানুষজন সন্ধ্যার পরে সাপের ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে এইসব সাপ। বিশেষ করে বন্যা ও নদীর পানিতে ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশে ঢুকছে। আর অতিদ্রুত এটি বংশবিস্তার করে চলছে।