কক্সবাজারের উখিয়ায় অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) এর শীর্ষ কমান্ডার রহিমুল্লাহ ওরফে মুছাসহ চারজনকে আটক করেছে র্যাব ১৫। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪৩ কেজি ৩১০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য, ম্যাগজিনসহ ১ টি বিদেশি পিস্তল, ২ টি দেশিয় তৈরী বন্দুক ও ৭ টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের তেলখোলা-বরইতলীর গহীন পাহাড়ী এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়েছে। বুধবার দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
আটকরা হলেন, ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাফিজ আহমেদের ছের আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অন্যতম কমান্ডার রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছা (২৭), ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৃত বদি আলমের ছেলে আরসার অন্যতম কমান্ডার শামছুল আলম প্রকাশ মাস্টার শামসু (২৯), কক্সবাজার শহরের জাফর আলমের ছেলে মো. শফিক (২৮) ও মৃত আবদুস সালামের ছেলে মো. সিরাজ (৩০)।
র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আল মঈন জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের তেলখোলা-বরইতলী গহীন পাহাড়ী এলাকায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মো. শফিক ও মো. সিরাজ নামের দুই বাংলাদেশি নাগরিককে আটক আটক করে। পরে আটকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ কেজি ৫৩০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এরপর একই তথ্যের ভিত্তিতে পৃথক অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির শীর্ষ কমান্ডার ও উখিয়ার ঘোনারপাড়া ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কমান্ডার রহিমুল্লাহ ওরফে মুছা এবং ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অন্যতম কমান্ডার শামছুল আলম ওরফে মাস্টার শামসু। এসময় আটকদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৬ কেজি ৭৮০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য, দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি। উদ্ধার করা বিস্ফোরক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ক্লোরেটস, ব্রোমোটস, পটাশিয়াম ও হেক্সামিথাইলিন টেট্রামাইন জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য। এসব রাসায়নিক দ্রব্য গান পাউডার বা উচ্চ বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহারের নজির রয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, আটকদের মধ্যে রহিমুল্লাহ ওরফে মুছা ও শামছুল আলম আরসা’র শীর্ষ নেতা এবং অপর দুইজন বাংলাদেশি নাগরিক ও আরসা’র সন্ত্রাসী দলের সহযোগী। গ্রেপ্তারকৃত আরসা সন্ত্রাসীরা বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজী, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটন করতো। তারা পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক চোরাচালান করতো। এছাড়া গ্রেপ্তার বাংলাদেশি নাগরিক শফিক ও সিরাজ উদ্ধার করা কৌশলে সীমান্ত এলাকা দিয়ে এনে নিজেদের হেফাজতে রাখতো এবং পরে সুবিধাজনক সময়ে আরসা সন্ত্রাসীদের কাছে সরবরাহ করে আসছিল। অভিযানে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে বোমা প্রস্তুত করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সংঘাতে ব্যবহার করার উদ্দ্যেশে মজুদ করা হয়েছিল আটকরা স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, আটক রহিমুল্লাহ ওরফে মুছা বোমা তৈরী ও অস্ত্র চালনায় পারদর্শি হওয়ায় আরসা’র গান কমান্ডার ও ঘোনারপাড়া ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জিন্মাদারের দায়িত্ব পায়। সে আরসা’র সদস্যদের বোমা তৈরী ও অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণও দিত। রহিমুল্লাহর সঙ্গে আরসা’র প্রধান আবু আম্মা জুননীসহ শীর্ষ নেতাদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত প্রায় সবক’টি হত্যাকান্ডসহ গত বছর নভেম্বরে সীমান্তে মাদকবিরোধ যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসী হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় তার সরাসরি অংশগ্রহণ রয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তার অন্যর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা সংঘাত ও সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে উখিয়া ও টেকনাফ থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানায় তিনি।